Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

কেন দেখবেন রাতসাসান?

বিনোদন ডেস্ক

ডিসেম্বর ১৮, ২০২১, ০৬:৪০ এএম


কেন দেখবেন রাতসাসান?

থ্রিলার সিনেমা মানে কী। থ্রিলার মানে জটিল রহস্য, টান টান উত্তেজনা, খুন ও খুনীদের গল্প, কিছুটা আবেগ। যা দর্শক মনে একদিকে যেমন ভয়ের সঞ্চার করবে তেমনই, কিছু কিছু সময় দর্শককে আবেগী করে তুলবে। আর যার রেশ রয়ে যাবে দর্শকদের মনে। মানে এক কথায়, শেষ হয়েও হইল না শেষ। 

এই ব্যাখ্যা শুনে অনেক দর্শকই একটি সিনেমার নাম বলবে সেটি হল রাতসাসান। তামিল যে সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার পর হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল বিশ্বে। থ্রিলার প্রেমী মানুষরা সিনেমাটি একবার দেখলেই তাদের থ্রিলার সিনেমার তালিকার প্রথমদিকে রাখবেন এই সিনেমাটি। যারা দেখেছেন সিনেমাটি তারা তো সুযোগ পেলেই আরও একবার চোখ বুলিয়ে নেন এই সিনেমায়, সেই সাথে সবাইকে দেখার জন্যেও আহ্বান জানান।

কিন্তু যারা দেখেননি, তারা নিশ্চয় ভাবছেন কেন দেখবেন রাতসাসান? কী আছে এই সিনেমায় যে কারণে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে দর্শক মহলে? চলুন তবে জেনে নেই কেন দেখবেন রাতসাসান? 

স্বপ্ন মানুষকে জীবনের সফল পথ দেখায়। কিন্তু সমাজের বিশৃঙ্খল আর অনিয়ম ব্যক্তিদের খপ্পরে আমাদের সেই স্বপ্ন আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। প্রতিনিয়ত ভেঙ্গে যায় হাজারও যুবক-যুবতীর স্বপ্ন। তেমনি একজন তরুণ, যার নাম অরুণ।বহু ক্রোশ পাড়ি দিয়ে জমিয়েছে সে স্বপ্নের রঙ কাটি, ইচ্ছা তার মুভি ডিরেক্টর হওয়ার। যদিও তার একটা স্ক্রিপ্টও কোন প্রযোজকের মন কেড়ে নিতে পারে নি। 

প্রত্যেকটা ডিরেক্টরেরই একটা নিজস্ব স্টাইল থাকে, এখানে অরুণ কুমারেরও একটি নির্দিষ্ট গল্পের মুভি বানানোর ইচ্ছা প্রবল থাকে, সেটি হল সিরিয়াল কিলিং! তার রুমের দেয়াল জুড়ে শুধু ভারতই নয়, প্রায় পুরো বিশ্বের নানান সময়ের আলোচিত সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে প্রকাশিত পেপার/ম্যাগাজিন/বুক কাটিং দিয়ে সাঁটা থাকে। দুর্ভাগ্যক্রমে যখন তার মুভি মেকিং কোন ভাবেই আলোর দিক দেখছিল না, তখন তার দুলাভাই তাকে এক প্রকার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে পুলিশের এস আই পদে জয়েন করিয়ে দেয়।

কিন্তু কাহানি মে টুইস্ট আসে তখন যখন অরুনের গল্পের সিরিয়াল কিলার নেমে আসে অরুনের শহরে। আর ঘটাতে থাকে  একের পর এক হত্যাকান্ড। আর এই সিরিয়াল কিলারের খুন করার প্যার্টান দেখে গাঁ শিউরে উঠে সবার।

প্রত্যেকবার স্কুলের কোন না কোন মেয়ে অপহৃত হতে থাকে। ঠিক তার দুই দিন পর তাদের লাশ পাওয়া যায় বিভিন্ন জায়গায়। খুবই বিকৃত ভাবেমেয়েগুলো কে হত্যা করা হত, এবং ইন্টারেস্টিংলি সবার বাড়ির আশেপাশেই একটা গিফট বক্স থাকত, যেখানে থাকত একটি পুতুলের কাটা মাথা এবং সে মাথাগুলো বিকৃত ভাবে কাটা। প্রতিটা লাশেরই চোখ উপড়ানো, শরীরে থাকে অজস্র কাটাকুটি। 

আশ্চর্যের ব্যপার হল, লাশগুলোর মুখমন্ডল গুলোও ঠিক সেইভাবেই কাটা থাকত। এভাবে চলতে চলতে ৪ নম্বর ভিক্টিম হয় অরুণের নিজের ভাগ্নি। যথারীতি তার লাশও পাওয়া যায় তার দুলাভাইয়ের গাড়ির পিছনের বক্সে। পুরো শহর হিমশিম খেতে থাকে সেই সিরিয়াল কিলারকে খুঁজতে খুঁজতে।

অরুন দিনরাত এক করে ফেলে সেই সিরিয়াল কিলারকে খুঁজতে। অবশেষে বিভিন্ন ক্লু মিলিয়ে দেখা দেখা যায় যে যে মেয়েগুলো হত্যা করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকেরই স্কুলে ঠিক তার দুই দিন আগে কোন না কোন ফাংশন অনুষ্ঠিত হয়েছে, এবং সেখানে একজন নারী ম্যাজিশিয়ান ম্যাজিক পারফর্ম করেছে, এই ক্লু ধরে এগিয়ে যেতে যেতেই এক সময়ে খুনী ধরা পড়ে। 

তবে এখানেও কিন্তু টুইস্ট শেষ হয় না। দেখা যায় খুনী একজন পুরুষ, যে কি না তার মায়ের বেশ ধরেই একের পর এক খুন করে চলে। কিন্তু কেন একজন পুরুষ নারী সেজে খুন করছিল স্কুলের নিরীহ মেয়েদের?  সেই কিলারের অতীত কী ছিল, কেন-ই বা সে এমন নৃশংস খুনের পথে পা বাড়াল? 

এইসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে রাম কুমার পরিচালিত তামিল সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার সিনেমা রাতসাসান। তামিল সিনেমা শুনে হতাশ হওয়ার কারণ নেই, কারণ সিনেমাটি ইউটিউবে আপনি হিন্দি ভাষাতেই খুঁজে পাবেন। সিনেমায় মুখ্য ভুমিকায় অভিনয় করেছেন বিষ্ণু বিশাল, অমলা পাল, সারাভানান। 

এবার আসা যাক, কেন দেখবেন রাতসাসান, সেই প্রশ্নের উত্তরে। 

কি নেই এই মুভিতে, ব্যাক গ্ৰাউন্ড মিউজিক, অভিনয়, আর একটু পর পর থ্রিল। একটু পর পর মনে হবে এই ধরা পরলো কিলার‌। মুভি থেকে চোখ সরাতে পারবেন না। 

জানিয়ে রাখি সিনেমার নাম "রাতসাসান" শব্দের অর্থ পিশাচ। কিন্তু এই সিনেমা দেখতে গিয়ে আপনি মোটেও পৈশাচিক আনন্দ পাবেন না। পাবেন একটি গতিময় শ্বাসরুদ্ধকর থ্রিলার দেখার টান টান উত্তেজনা।

থ্রিলার সিনেমা মানেই দর্শকের শেষ পর্যন্ত আকর্ষণ ধরে রাখা। এরপর কী হতে চলেছে জানার আগ্রহ তৈরি করা। এবং শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত গল্পের শেষ কী সেটা যেন দর্শক আচ করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখা। দর্শক যদি মাঝ পথেই বুঝে ফেলে আসল খুনিকে তাহলে সিনেমা দেখার আগ্রহ আর বাঁচে না। আর বেশীর ভাগ থ্রিলার সিনেমাতেই তাই হয়। শেষ হওয়ার আগেই বুঝে ফেলা যায় সর্ষের ভেতরে ভুত কে।

কিন্তু রাতসাসান এমন একটি সিনেমা যতক্ষন না পরিচালক চাইবেন আপনি জানুন আসল রহস্য কী আপনি বুঝতে পারবেন না এবং আপনার কৌতূহল কেবল বাড়বে।সেটা একটা সার্থক থ্রিলার সিনেমার সংজ্ঞা। এই সিনেমায় আপনি দম ফেলার একটুও সুযোগ পাবেন না। প্রতিটা খুন আর রহস্য আপনাকে ভাবাতে বাধ্য করবে। আর ইমুশনের জায়গাটা তো ছিল একেবারে কঠোর।

এই সিনেমার প্রতিটি দৃশ্যে যে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ব্যবহার করা হয়েছে তা অসাধারণ। প্রধানত, নৃশংস খুনের দৃশ্যে এমনকিছু ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ব্যবহার করা হয়েছে

যা সাধারণত নৃশংস খুনের দৃশ্যে ব্যবহার করা হয় না কিন্তু এক্ষেত্রে পরিচালক অসাধারণ ভাবে সফ্ট মিউজিকের সাথে খুনের নৃশংস দৃশ্যের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। 

দর্শকদের কাছে গল্পের উপস্থাপনা পদ্ধতি বেশ ভালো। সম্পূর্ণ সিনেমার চিত্রনাট্য বেশ আকর্ষণীয়। অরুনের ভূমিকায় বিষ্ণু বিশাল আর ভিজি ভূমিকায় আমলা পল ভালো অভিনয় করছেন। অরুণের ভাগ্নির লাশের ব্যাপারটা যেভাবে ওর বোনের কাছে লুকিয়ে মর্গে নিয়ে যাওয়া হল, সেই ৭-৮ মিনিট আপনার মনে দাগ কাটবে। অসাধারণ অভিনয়, সিনেমাটোগ্রাফি এবং পরিচালকের পান্ডিত্য মুগ্ধ করবে আপনাকে।

এবার আসি এই ছবির বেশ কিছু জায়গায়, যেখানে দর্শক হিসেবে আপনার কিছু অসঙ্গতি লাগতে পারে। 

হয়ত প্রত্যেক সিরিয়াল কিলারেরই কিছু নিজস্ব স্টাইল থেকে থাকে, যার ফলে তাদের কিলিং এর ধরন প্রায় একই থাকে, কিন্তু তারা এখানে কিলার প্রত্যেকবারের ফাংশনের ম্যাজিকে এসিস্ট করা মেয়েগুলোকেই কেন বেছে নিলেন, এতে করে তার ধরা পড়াটা বেশ সহজ ছিল, এত পেঁচানোরও দরকার ছিল না। এখন অনেকেই সিনেমাতে যেভাবে উপস্থিত করা হয়েছে বিষয়টা তার সাথে সুর মিলিয়ে বলতে পারেন, সেই মেয়েটিকে প্রলুব্ধ করা সহজ ছিল। কিন্তু বিষয়টি তেমন না, যেই বয়সী মেয়েদের এখানে দেখানো হয়েছে, তারা ম্যাজিকে এসিস্ট না করলেও শুধু ম্যাজিক দেখার ফলেই পরবর্তীতে সেই খুনীর প্ররোচনার ফাঁদে পড়ত।

হরমোনাল প্রবলেমের কারণে যে কিশোরটি ইম্পোটেন্ট ছিল, সেই লোকটি বড় হয়ে একজন পুলিশ অফিসারের সাথে যেভাবে পাল্লা দিয়ে ফাইট করে গেল, সেটা হাস্যকর বললেও কম বলা হয়ে যাবে। যদিও অনেকেই বলবে মুভিটিতে একটু বাড়তি উত্তেজনা যোগ করাই ছিল এত উদ্দেশ্য, তাহলে মেনে নিতে আপত্তি নেই যে এর দরকার ছিল। 

আর সিনেমা কেবল বিনোদনের জন্য। সেক্ষেত্রে আপনি একটু লজিক সাইডে রেখে শুধু বিনোদনের জন্যে দেখলে নিশ্চিত আসল থ্রিলারের স্বাদ উপভোগ করবেন। 

সব মিলিয়ে রাতসাসান একটি অসাধারণ থ্রিলার সিনেমা। এই সিনেমা শেষ হয়েও রেশ রেখে যায় মনে। 

আমারসংবাদ/এডি