Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

কটিয়াদীতে কৃষকের আদর্শ বীজতলা তৈরির কারিগর নূর আলম গন্ধী

জানুয়ারি ৭, ২০১৫, ০৬:৫৬ এএম


কটিয়াদীতে কৃষকের আদর্শ বীজতলা তৈরির কারিগর নূর আলম গন্ধী

    কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ঘিলাকান্দি গ্রামের কৃষক মোজাহিদ মিয়া, কাক ডাকা ভোরে বীজতলার জমি প্রস্তুত করছিলেন । এমন সময় কুয়াশার চাদর ভেদ করে একটি মোটর সাইকেল জমির পাশের সড়কটিতে এসে থামল, মোজাহিদ বুঝতে পারেন মোটর সাইকেল থেকে নেমে একজন লোক তার দিকে আসছেন। কাছাকাছি আসতেই মোজাহিদ চিনতে পারেন তিনি আর কেউতো নন তার অতি পরিচিত ব্লক কর্মকর্তা নূর আলম গন্ধী ভাই। এই কৃষি কর্মকর্তার সকালে আসার কারণ তার কৃষকের বীজতলাটি যাতে আদর্শ পদ্ধতিতে তৈরি হয় তা নিশ্চিত করা।

এভাবেই সকাল থেকে সন্ধা কৃষকের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ব্লকের অধিকাংশ বীজতলাই আদর্শ পদ্ধতিতে তৈরি করে কৃষকের প্রশংসা কুড়িয়েছেন এই কৃষি কর্মকর্তা। কিন্তু প্রথমে কাজটি খুব কঠিন ছিল। কৃষকরা তার পরামর্শ শুনতেই চাইতনা। তারা বেড না করে অল্প জায়গায় খুব ঘন করে বীজ ফেলতো। ফলে কৃষকদের প্রচুর বীজের অপচয় হতো, অধিকাংশ বীজ গজাতোনা, চারা হতো লিকলিকে দুর্বল, রোগাক্রান্ত ও নিস্তেজ। তাছাড়া বেড ও নালা না থাকায় বীজতলার আগাছা দমন সেচ প্রদান রোগ বা পোকামাকড়ের আক্রমন হলে পরিচর্যা করা ছিল ভিষন দুরুহ। ফলে তাদের ফসলের বিপর্যয় ঘটত।

ব্লকের এই কর্মকর্তা আস্তে আস্তে তাদের বুঝাতে সক্ষম হলেন যে, এক মিটার চৌড়া বেড করে ও দুই বেডের মাঝ খানে নালা রেখে বীজতলা তৈরি করে প্রতি শতাংশে দুই থেকে দেড় কেজি বীজ বপন করলে চারা গুলো হবে সুস্থ সবল ও মোটাতাজা। এতে করে একদিকে যেমন বীজের অপচয় কমে যাবে অন্যদিকে অল্প চারাতে বেশী পরিমান জমি রোপন করা যাবে। শুরুতে কয়েক চাষি তার কথামত কাজ করলেও অধিকাংশ কৃষক নালার কারণে জায়গা নষ্ট হওয়ার অজুহাতে তার পরামর্শ এড়িয়ে যেতো। পরবর্তীতে কয়েক চাষির বীজতলায় ভাল মানের চারা উৎপন্ন হতে দেখে আশপাশের  কৃষকরা আস্তে আস্তে তার পরামর্শ মতো বীজতলা করতে  আগ্রহী হয়। তার বীজতলা তৈরির প্রযুক্তিটি উপজেলার কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

বর্তমানে তার বনগ্রাম ইউনিয়নের জামষাইট ব্লকে বিশ হেক্টর বীজতলার মধ্যে পনের হেক্টর আদর্শ বীজতলা। কৃষকরা এ প্রতিনিধিকে জানায়, ব্লকের এই কর্মকর্তা খুবই কর্মঠ, সারাদিন মাঠে ঘুরে ঘুরে আমাদের নানা সু -পরামর্শ দিয়ে সহজোগিতা করে যাচ্ছেন। জামষাইট ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর আলম গন্ধী বলেন, এখন বীজতলার জমি তৈরির সময়, অনেক কৃষক সনাতন পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে।

তাই সর্বক্ষনিক কৃষকের পাশে থেকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোজাহার হোসেন আহাম্মেদ বলেন, নূর আলম গন্ধী একজন সত্যিকার সম্প্রসারণ কর্মী, কৃষকের কাছে কৃষির নানান আধুনিক প্রযুক্তি বিস্তারে তার আগ্রহ নিষ্ঠা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠা সত্যিই প্রসংসনীয়। তার মতো আরও কিছু সংখ্যক ব্লক কর্মকর্তার চেষ্টায় অত্র উপজেলায় আদর্শ বীজতলা তৈরি পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।