Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

কুষ্টিয়ায় পেঁপে চাষ করে হাফিজুলের ভাগ্যবদল

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

নভেম্বর ২২, ২০২০, ১২:২০ পিএম


কুষ্টিয়ায় পেঁপে চাষ করে হাফিজুলের ভাগ্যবদল

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া এলাকার কৃষক হাফিজুল ইসলাম। ৯ম শ্রেণির গোন্ডি পেরিয়ে ইতি হয় লেখাপড়ার। তারপর থেকে কৃষি কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কৃষি অফিসের পরামর্শে এ বছর শাহি জাতের পেঁপে চাষ করে বেশ সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি। মাত্র ১ বিঘা জমিতে ১ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রয় করে এলাকার কৃষকদের মাঝে সাড়া ফেলেছেন তিনি। হাফিজুল এখন এলাকার অন্য চাষীদের কাছে মডেল। তার পুরো বাগানটি যেনো চোখ জোড়ানো এক ক্ষেত। গাছের মাঝ থেকে ডগা পর্যন্ত ছোট, মাঝারি, বড় আকারের পেঁপে ধরে রয়েছে। হাফিজুলের সাফল্য দেখে অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন এই পেঁপে চাষে। 

শনিবার (২১ নভেম্বর) সকালে হাফিজুলকে দেখা যায় তার পেঁপের বাগানে কাজ করতে। পুরো বাগান ঘুরে দেখা যায় এ যেনো গাছে টাকা ধরে রয়েছে। এক একটি গাছে প্রচুর পরিমানে পেঁপে। ৪ দিন আগেও তিনি ৬০মন পেঁপে বিক্রি করেছেন তার ২২ কাঁঠা জমির পেঁপে বাগান থেকে। 

কথা হয় হাফিজুলের সাথে। তিনি জানান, ৫ ভাই এর মধ্যে সবার ছোট ছিলাম আমি। পরিবারের টাকার অভাবে লেখাপড়া করতে পারিনি। মাঠের চাষাবাদ শুরু করি। তারপরে এলাকার অন্য চাষীদের মতো তামাকের চাষ শুরু করি। একসময় দেখি তামাকে একসাথে টাকা পাওয়া যায় ঠিকই কিন্তু প্রচুর কাজ করতে হয়। আর বাড়ীর সকলে মিলে এত কাজের পরেও বিক্রি করলে খুব একটা লাভ হয় না।

তিনি বলেন, ২০১৫ সালে আমাদের চিথলিয়া ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার সুকেশ রঞ্জন পাল আমাকে পেঁপে চাষ সম্পর্কে পরামর্শ দেন। কিভাবে বানিজ্যিক ভাবে এ পেঁপের চাষ করা যায় সেটা সম্পর্কে জানি। পরে কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করি পেঁপে চাষ। সেময় এই পেঁপে চাষ সম্পর্কে অনেকেই অনেক কথা বলতো। 

তিনি বলেন, মাত্র ১ বিঘা জমিতে পেঁপের চাষ শুরু করি। গাছ লাগানোর পরে ৩-৪ মাসে গাছে পেঁপে ধরলো এবং ৫ মাস পরেই সেটা বাজারে বিক্রির উপযোগী হলো। পেঁপে চাষ খরচ ও খাটুনি কম। আর ভালো দাম পেলে খুবই লাভ হয়। তাই আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।

হাফিজুল ইসলাম বলেন, গত বছর ২ বিঘা জমিতে পেঁপের চাষ করি। বিঘাপ্রতি আমার ২০ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছিলো। আর প্রায় ৯০ হাজার টাকার বেশি করে বিঘাপ্রতি পেঁপে বিক্রি করেছিলা।

তিনি বলেন, এবছর আমি ৮ বিঘা জমিতে হাইব্রিড শাহি জাতের পেঁপের চাষ করেছিলাম। অতিরিক্ত বৃষ্টি আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমার ৭ বিঘা জমির পেঁপে গাছ নষ্ট হয়ে যায়। সবে মাত্র এক এক গাছে ৬-৭ কেজি করে পেঁপে হয়েছিলো। বৃষ্টির কারণে গাছগুলো মরে গেলো। তবে সে ক্ষতি পুশিয়ে দিচ্ছে আমার এই ২২ কাঁঠা জমির পেঁপেতেই।

তিনি আরও বলেন, বাজারে পেঁপের যে দাম তাতে খুবই লাভ। আগে ৩-৪ টাকা কেজি পেঁপে বিক্রি করেছি। তারপরেও লাভ হয়েছে। এখন তো মাঠ থেকেই পাইকারী বিক্রি করছি ২০ টাকা কেজি দরে। বর্তমানে আমার ২২ কাঁঠা জমিতে ৪৩০-৪৪০টি পেঁপে গাছ আছে। এর মধ্যে ৪০ রয়েছে পুরুষ গাছ। বাঁকী সব গাছগুলোতে বেশ ভালো পেঁপে ধরেছে। খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকার মতো।

‘প্রতি গাছে ২০ কেজি করে পেঁপে পাবো বলে আশা করি। আর এবার পেঁপের সাইজ খুবই ভালো। আর খেতেও খুব সুস্বাদু। ৪ দিন আগেও এই জমি থেকে ৬০ মন পেঁপে বিক্রি করেছি। এর আগেও ৩ বার পেঁপে বিক্রি করেছি। এক মাস পর পর এ জমি থেকে পেঁপে বিক্রি করি। ইতোমধ্যে আমি এক লাখ টাকার উপরে পেঁপে বিক্রি করেছি। এবং আরো ৫০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করবো এই জমি থেকেই। অন্য বছর ৪ বিঘায় যে লাভ হয় না, এবছর বাজারে দাম ভালো হওয়ায় এক বিঘাতেই তার বেশি লাভ হচ্ছে।’

হাফিজুল ইসলাম জানান, পেঁপে চাষের ক্ষেত্রে খুব একটা খরচ নেই। আর পরিশ্রমও কম। আমার কাছ থেকে অনেকেই এই পেঁপে চাষ সম্পর্কে জেনেছে। এছাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের লোকজন নিয়মিত আমার ক্ষেত পরিদর্শন করে আমাকে পরামর্শ দেন। যার কারণে কখন কি করতে হবে তা সঠিক নিয়মে করতে পারি।

অন্যান্য চাষের চেয়ে পেঁপে চাষ লাভজনক হওয়ায় হাফিজুল ইসলামের মতো এলাকার অন্য কৃষকরাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন এই পেঁপে চাষে। 

একই এলাকার কৃষক মিনহাজ আলী বলেন, যে পরিমান পেঁপে ধরছে তাতে তো দেখছি এই পেঁপে চাষ লাভজনক ফসল। হাফিজুলের দেখা দেখি তার পাশের জমিতে করেবে এই পেঁপে চাষ এমন করে এই পুরো মাঠই তামাকের পরিবর্তে পেঁপে চাষে ঝুকবে কৃষকরা। তামাকের মতো তো এত খাটনির কাজ না, ঘুম কামাই করা লাগে না, মাঠ থেকেই বিক্রি করা যায়। সামনে বছর আমি নিজেও ১০ কাঁঠা জমিতে পেঁপে চাষ করবো বলে মনে করছি।

কৃষক আমিরুল ইসলাম বলেন, সবজি হিসাবে পেঁপে খেতে খুবই ভালো লাগে। আর চাষ করতে খরচ কম। এটা চাষ করাও সহজ। আমি ভাবছি ১ বিঘা জমিতে এ শাহি জাতের পেঁপের বাগান করবো।

খুবই কম সময়ে এ পেঁপে চাষ করে কৃষকরা বেশ ভালো লাভবান হতে পারবেন বলে জানান মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ।

তিনি জানান, পুষ্টিমানের দিক থেকে পেঁপে খুবই স্বাস্থ্যকর একটি খাদ্য। আর পেঁপের চাষাবাদও খুব সহজ। আর ফলনও খুবই ভালো। বাজারে দামও বেশ ভালো। আমরা কৃষকদের এ পেঁপেসহ অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায় এমন ফসল চাষাবাদের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি।

তিনি বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আমরা কৃষকদের বিনামুল্যে প্রণোদনায় সার, বীজ  প্রদান করি। এছাড়া কারিগরি সহযোগিতা এবং পেঁপেসহ বিভিন্ন ফসল চাষের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করি। চিথলিয়া এলাকার হাফিজুল ইসলাম শাহি জাতের পেঁপে চাষ করে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করা হয়। এবছর তিনি বেশ ভালো দাম পেয়েছেন। তার এই সফল্য দেখে অনেক শিক্ষিত বেকার এখন পেঁপে চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

মিরপুরে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা অনুষ্ঠিত কুষ্টিয়ার মিরপুরে দিনব্যপি অনুষ্টিত হলো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা। গ্রামীন এ খেলা দেখতে এলাকারসহ দুর দুরান্তের লোকজন ছুঁটে আসে। এক উৎসবের আমেজে, বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে দর্শকরা উপভোগ করে এই খেলা।   

রোববার (২২ নভেম্বর) দিনব্যাপি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের ‘বারাতালা স্পোটিং ক্লাব’ এর আয়োজনে বারুইপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। সকালে এ খেলার শুভ উদ্বোধন করেন দিশা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রবিউল ইসলাম।
 
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম, মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক তসলিম উদ্দিন খান, বারুইপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. শফিকুল ইসলাম মন্টু, বারাতালা স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি তুফান আলী, সাধারণ সম্পাদক মাসুম বিশ্বাস প্রমুখ। 

বারাতালা স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি তুফান আলী বলেন, বাংলাদেশে ইতিহাস-সংস্কৃতির অংশ হিসেবে বাঙালির রক্তে মিশে ছিল ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা, যা কালের বিবর্তনে এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। আমরা আমাদের উদ্যোগে প্রতিবছর লাঠিখেলার আয়োজন করে থাকি। এই খেলা টিকিয়ে রাখতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। গ্রামীণ এ লাঠি খেলায় জয়-পরাজয় মুখ্য নয়। বরং দর্শকদের বিনোদন দিতেই এমন আয়োজন করা হয়। ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলায় এবার অংশ নেয় হাজরাহাটি ও কবরবাড়ীয়া দল।

আমারসংবাদ/কেএস