Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

চাটমোহরে মাল্টার বাম্পার ফলন

শিমুল বিশ্বাস, চাটমোহর (পাবনা)

অক্টোবর ৩, ২০২১, ০৯:০০ এএম


চাটমোহরে মাল্টার বাম্পার ফলন

পাবনার চাটমোহরের মাল্টা চাষীরা ইতিমধ্যেই তাদের সমতলের বাগান থেকে মাল্টা সংগ্রহ শুরু করেছেন। ভালো ফলন ও দাম পেয়ে খুশি তারা। মাল্টা পাহাড়ি এলাকার ফল হলেও বছর তিনেক পূর্বে কিছু চাষী চাটমোহরের সমতল ভূমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে সবুজ বাহারী ফল মাল্টা চাষ শুরু করেন। সফলও হন তারা। তাদের সফলতা দেখে অন্যরাও আগ্রহী হচ্ছেন মাল্টা চাষে। ফলে বাণিজ্যিক ভাবে মাল্টা চাষের পরিধি বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

চাটমোহর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে চাটমোহরে পনেরো হেক্টর জমিতে মাল্টার আবাদ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে হেক্টর প্রতি ১৫ থেকে ১৬ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যাবে। এ হিসেবে চাটমোহরে ২২৫ থেকে ২৪০ মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদন হতে পারে।

উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের মাঝগ্রাম এর মাল্টা চাষী ইয়াছিন আলী স্বপন আমার সংবাদকে জানান, অষ্টম শ্রেণী পাস করার পর সাংসারিক অনটনের কারণে আর পড়া লেখা করতে পারিনি। ২০১৫ সালে বাবার মৃত্যু হলে সংসারের হাল ধরি আমি। এলাকায় একটি ইলেকট্রনিক্স এর দোকান দেই। মাঝে মাঝে বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা জাগলেও ভেবেছি সেখানে গিয়েও তো কাজ করতে হবে। 

গ্রামের অনেক মানুষ বিদেশে গিয়ে কাজ করে। যাওয়ার খরচ তুলতেই তাদের দুই-তিন বছর লেগে যায়। অনেকে প্রতারিত হয়। তাই বিদেশ যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে দেই। আদর্শ নার্সারীর মালিক মামুন ভাইয়ের উৎসাহে ভারতীয় এবং বারী-১ জাতের মাল্টা চাষ শুরু করি। 

২০১৮ সালে বাড়ির সামনের নিচু সমতল জঙ্গল পরিষ্কার করে এক বিঘা জমিতে ৮২ টি মাল্টার গাছ লাগাই। ২০১৯ সালে ২১ কেজি মাল্টা বিক্রি করি এবং কিছু খাই। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে মাল্টা সংগ্রহ শুরু করি। খুচরা ১৫০ টাকা কেজি এবং পাইকারী ১’শ টাকা কেজি বিক্রি করি। পূর্ণ ফলন তখন ও শুরু হয়নি। 

৫২ টি গাছে কম বেশি মাল্টা ধরেছিল। প্রায় ৫০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করি। আশা করছি চলতি মৌসুমে প্রায় ২৫ মন মাল্টা সংগ্রহ করতে পারবো যার আনুমানিক মূল্য প্রায় দেড় লাখ টাকা। গত বছর বাড়ির পাশে নতুন আরেকটি বাগান করেছি। এবার প্রথম সে বাগানের কিছু গাছে মাল্টা ধরেছে।

তিনি আরো জানান, “আমার মনে হয় মাল্টা চাষ বেশ লাভ জনক আবাদ। বানিজ্যিক ভাবে চাষ করলে, উঁচু রৌদ্রময় এক বিঘা জমিতে ১’শ গাছ লাগালে পরিণত বয়সে খুব সহজেই বিঘা প্রতি প্রায় দুই লাখ টাকা লাভ করা সম্ভব। বছরে প্রতি বিঘায় খরচ প্রায় ১৫ হাজার টাকা।”

অপর মাল্টা চাষী মথুরাপুর ইউনিয়নের উথুলী গ্রামের সানোয়ার হোসেন আমার সংবাদকে জানান, আমার বড় ভাই এবং আমি কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় এনএটিপি-২ প্রকল্পের আওতায়  দেড় বিঘা জমিতে গড়ে তুলি শখের মাল্টা বাগান। গত বছর ছোট ছোট গাছ গুলোতে গড়ে পাঁচ-সাত কেজি করে মাল্টা ধরেছিল। প্রায় ৭০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছিলাম আমরা। আমাদের মাল্টা চাষ, ফলন ও লাভ দেখে এলাকার অনেকের আগ্রহী হন মাল্টা বাগান করতে। এবছর অতি বৃষ্টির কারণে মাল্টা চাষ ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। ইতিমধ্যে পরিপক্ক সবুজ ফল সংগ্রহ শুরু করেছি। আশা করছি এবারও যথেষ্ট লাভ করতে পারবো।

চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.এ মাসুম বিল্লাহ আমার সংবাদকে জানান, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল মাল্টা। উঁচু জমি যেখানে বৃষ্টির পানি জমে থাকে না এমন জমিতে মাল্টা ভাল হয়। যে মাটির পিএইচ এসিডিক হয় সে মাটি মাল্টা চাষের জন্য ভালো। 

তিনি আরো জানান, চাটমোহরের গুনাইগাছা, মথুরাপুর, হরিপুর, মূলগ্রাম ও ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের উঁচু জমি গুলোর মাটি মাল্টা চাষের উপযোগি। স্থানীয় বাজারে এ এলাকায় উৎপাদিত মাল্টার বেশ চাহিদা রয়েছে। সবুজ বর্ণের মাল্টা গুলোর স্বাদ ও মিষ্টতা অন্য যে কোন মাল্টার চেয়ে কম নয়।

আমারসংবাদ/এআই