আমদানি পণ্যের উপর নির্ভরতা কমাতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

বাসস প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২২, ১২:০৭ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে তাদের নিজেদের জন্য খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং যেকোনো সংকট মোকাবেলায় রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আজ সন্ধ্যায় একাদশ জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশনে তাঁর সমাপনী ভাষণে এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের খাদ্য উৎপাদন আরো বাড়াতে হবে। নিজেদের  উৎপাদনটাকে ধরে রাখতে হবে। আর আমদানীকৃত পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। সেই চেষ্টাই আমাদের করতে হবে।  সাথে সাথে রপ্তানী বাড়াতে হবে এবং যেজন্য তাঁর সরকার বিভিন্ন দেশে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্ব মন্দার মধ্যেও তাঁর সরকার অর্থনীতিটাকে ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এ জন্য সকলকে কৃচ্ছতা সাধন করতে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ও পানির ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ারও আহ্বানও জানান তিনি। 
তিনি প্রতিটি পরিবারকে এ বিষয়ে সচেতন হবার আহবান জানান। কেননা ইউরোপের অনেক উন্নত দেশে রেশনিং চলছে এবং এই শীতে বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত রাখতে তারা নতুন পরিকল্পনা করছে। কাজেই আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে এবং আগে থেকেই যে কোন অবস্থার জন্য তৈরী থাকতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এই মুহূর্তে যে জিনিসটার খুব বেশি প্রয়োজন নেই সেই বিলাস দ্রব্য আমদানী আমাদের কমাতে হবে। আর এর ওপর আমাদের ট্যাক্সও বসাতে হবে বেশি করে।’
বিদেশি ঋণ প্রসঙ্গে বিরোধী দলের উপনেতার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আমাদের মোট সরকারি ঋণ জিডিপির ৩৬ শতাংশ। আর বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ জিডিপির ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর অন্তত এতটুকু বলতে পারি আমরা কোন দিনও ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হইনি। আমরা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করে যাচ্ছি। আমরা ঋণ খেলাপি (লোন ডিফল্টার) হইনি কখনো। আর ভবিষ্যতেও ইনশাল্লাহ হবনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী বিপর্যস্ত অর্থব্যবস্থা থেকে বাংলাদেশ আলাদা নয়। বাংলাদেশকেও তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এই সংকটকে আরো ঘণীভূত করেছে। কারণ প্রতিনিয়ত ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। কাজেই আমাদেও মত  তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো যাদের খাদ্য পণ্য, জ্বালানি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানী করতে হচ্ছে তারাও সংকটে পড়েছে। এরপরেও আমি বলবো আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
দেশের মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে তাদের চাহিদা সরকার পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারপরেও চাপ রয়েছে কেননা পণ্য উৎপাদনেও ভতুর্কির পরিমাণ অস্বাভাবিক রকম বেড়ে গেছে।

তাঁর সরকার করোনার মধ্যে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট দিতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাথাপিছু আয় হয়েছে ২ হাজার ৮শ ২৪ মার্কিন ডলার যেটা বিএনপি আমলে (২০০৫-০৬) অর্থবছরে ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। পাশাপাশি বাজেটে উন্নয়ন খাতে সরকার ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বাজেটের খাত ওয়ারি বরাদ্দের পরিমান বিশ্ব মূল্যস্ফীতির কারণে বেড়ে গেছে উল্লেখ করে বেশ কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে আমাদের ভর্তুকি ধরা ছিল ১৭ হাজার কোটি টাকা, আজকে সেখানে অতিরিক্ত চাহিদা তৈরী হয়ে প্রয়োজন হয়েছে ৩২ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ দিতে গেলে এই ভতুর্কি দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি তেলে অতিরিক্ত ভতুর্কি লাগছে ১৯ হাজার ৫শ’ ৫৮ কোটি টাকা। খাদ্য আদমানীতে অতিরিক্ত ভতুর্কির প্রয়োজন হচ্ছে ৪ হাজার কোটি টাকা। টিসিবি বা অন্যান্য জনবান্ধব কর্মসূচিতে ভর্তুকি লাগছে ৯ হাজার কোটি টাকার। কেননা এক কোটি মানুষকে বিশেষ কার্ড দিয়ে সরকার স্বল্পমূল্যে খাদ্য পণ্য সরবরাহ করছে। সারও কৃষি পণ্য আমদানীতে অতিরিক্ত ভর্তুকি লাগছে ৪০ হাজার ২শ’ ৪৭ কোটি টাকার। তার মানে এক লাখ ৫ হাজার ১০৫ কোটি টাকার শুধু ভর্তুকির চাহিদা বেড়েছে।

সরকার প্রধান এ সময় বিশ্ব বাজারে পণ্য মূল্য বৃদ্ধির কিছু উদাহরণ টেনে বলেন, ডিজেলের ব্যারেল প্রতি মূল্য ১৩২ ডলার বা তার বেশি থেকে প্রায় ১৭০ হয়েছে।  গ্যাস সরবরাহে নভেম্বর মাসে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ঘন মিটারেই ১০ টাকা ৬০ পয়সা হারে ভর্তুকি গুণতে হচ্ছে। এলএনজিকে প্রতি ঘনমিটারে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে ৪৮ টাকা। সেভাবে ইউরিয়া সার ৭৫ টাকায় ক্রয় করে ২২ টাকায়, টিএসপি ৫৯ টাকায় করে কৃষক পর্যায়ে ২২ টাকায় এবং অন্যান্য সারও এভাবে উচ্চমূল্যে ক্রয় করে ন্যায্যমূল্যে কৃষক সরবরাহ করতে ভর্তুকি বহুগুণে বেড়ে গেছে।

ইএফ