জুলাইয়ে শহীদদের আত্মত্যাগ জাতিকে একটি ন্যায় ও সাম্যভিত্তিক, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
বাণীতে ড. ইউনূস বলেন, “জুলাই আমাদের নতুন করে আশার আলো দেখিয়েছে—একটি ন্যায় ও সাম্যভিত্তিক, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার। হাজারো শহীদের আত্মত্যাগ আমাদের রাষ্ট্র সংস্কারের যে সুযোগ এনে দিয়েছে, তা যেকোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে।”
তিনি বলেন, “পতিত স্বৈরাচার ও তার স্বার্থলোভী গোষ্ঠী এখনো দেশকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। আসুন, আমরা মিলে এমন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলি যেখানে আর কোনো স্বৈরাচারের ঠাঁই থাকবে না।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে আজ এক অবিস্মরণীয় দিন। এক বছর আগে এই দিনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পূর্ণতা পায় এবং দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটে। দেশের আপামর জনসাধারণের যূথবদ্ধ আন্দোলনের ফসলই এই ঐতিহাসিক অর্জন। এ উপলক্ষে সকল নাগরিককে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।”
তিনি আরও বলেন, “আজ আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেই সাহসী তরুণ, শ্রমিক, দিনমজুর ও পেশাজীবীদের, যারা ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে শাহাদত বরণ করেছেন। আহত ও চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাওয়া জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিও আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।”
ড. ইউনূস বলেন, “টানা ১৬ বছরের স্বৈরাচারী অপশাসনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত বিস্ফোরণ ছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থান। এর মূল লক্ষ্য ছিল—একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এবং দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে রাষ্ট্রকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া।”
তিনি জানান, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এসব লক্ষ্য বাস্তবায়নে রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল খাতে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে, জুলাই গণহত্যার বিচারের কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণ ও আহতদের পুনর্বাসনের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে রাজনৈতিক ও নির্বাচনী ব্যবস্থা পুনর্গঠনসহ প্রয়োজনীয় সব সংস্কারে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে। একটি টেকসই রাজনৈতিক সমাধান এবং শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে অন্তর্বর্তী সরকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
ইএইচ