মাগুরা ভণ্ড পীর আতিয়ারের ভণ্ডামি ফাঁস হয়েছে! এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বইছে কমেন্টের ঝড়। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওফুটেজে দেখা গেছে, উচ্ছৃঙ্খলভাবে জিকির করা সহ শিশু সন্তানকে লাথি মেরে চিকিৎসা প্রদান।
এক পায়ের কাছে কুরআন শরিফ, অন্য পায়ের কাছে নারীর মাথা নত দৃশ্য। এসব ভিডিও গণমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় জনমনে বিতর্ক শুরু হয়েছে মাগুরাজুড়ে। সবার কাছে প্রশ্ন— কে এই ভণ্ড পীর বাবা।
ঘটনা নিশ্চিত জানতে ছব্দালপুর নহাটা পৌঁছালে খাদেম আতিয়ার রহমান জানান, গরিব শাহ্ দেওয়ান বাংলাদেশের সাত স্থানে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর সেই সব স্থানে দেয়া হয়েছে কবর। আর এভাবেই দেশজুড়ে রয়েছে আনুমানিক সাতটি স্থানে কবর। আর এই কবরকে ঘিরে নামকরণ করা হয়েছে, আস্তে আস্তে স্থান বিশেষ যেমন— দরগা, দরবার শরিফ, পীর সাহেব, ওলির রওজা, মাজার শরিফ ইত্যাদি নামে।
যেমন— মাগুরা তার জন্মস্থানে নাম দেয়া হয়েছে মাহবুবে এলাহি কুতুবে রব্বানি গাউসুল আজম শাহ সুফি দরবেশ হজরত খাজা গরিবুল্লাহ শাহ রহ.। মাগুরা দরবার শরিফের খাদেম হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত খাদেম খন্দকার মো. আতিয়ার রহমান দেওয়ান।
তিনি এখনো রহ. হননি তবে হয়ে যাবেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে। আর এমনি (সিরিয়াল) মাজারটির দেয়ালে টানানো রয়েছে। তার এ দরবার শরিফের ব্যবসা বেশ ভালো যাচ্ছে।
আগের তুলনায় বেশ টাকা পয়সার মালিক তিনি, আগে নরমাল সিগারেট খেলেও এখন খান বনসন সিগারেট। তার সাক্ষাৎকারের সময় সে প্রমাণ মেলে।
ভিডিওফুটেজে দেখা গেছে, মাজারে আশা ব্যক্তিকে বলছেন ২১ দিন পর ৪০ কেজি চাল জোড়া খাসি ইত্যাদি নিয়ে আসবেন। আর এভাবে একাধিক সহজ সরল মানুষ মানত ও চিকিৎসার জন্য দরবারে আসায় তিনি আঙুল ফুলে কলাগাছ। সরাসরি সাধারণ জনগণের মাঝে প্রতিনিয়ত শিরক, কুফর, বেদাতি প্রথা প্রচলিত করছেন।
এমন ও দেখা গেছে, তার পায়ের কাছে কুরআন শরিফ এবং বৃদ্ধা নারী নতজানু, আরো দেখা গেছে— চিকিৎসার নামে দুধের শিশুকে লাথি মারা, এমন কি দুহাতের তালু এক করে ভিন্ন আচরণ, জিকিরের নামে ভণ্ডামি লাফালাফি।
সাংবাদিকদের এক সাক্ষাৎকারে খাদেম আতিয়ার রহমান দেওয়ান বলেন, হাজার হাজার লোকজন আসে— যে যে নামে আমাকে ডাকে আমি সে নামে সাড়া দিই। কেউ পীর সাহেব বলেন, কেউ বাবা বলেন, কেউ দয়াল বাবা, বলছেন কেউ গুরু, আবার কেউ দেওয়ান বলেন। মাজারে দানবাক্স রয়েছে বছরে কয়েকটি অনুষ্ঠান হয় আর সেগুলো খরচ করে দরবার চালায়। বাপ-দাদা থেকে চলে আসছে এ দরবার।
তবে খাদেম আতিয়ার রহমানের কাছে গরিব শাহের লাশ এখানে দাফন করা হয়েছে কি না— এ প্রশ্নের জবাবে তিনি মুখ খুলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আমি জানি না, শুনেছি। তাবিজ কবজ দিয়ে সাধারণের কাছে থেকে গ্রহণ করছেন বিভিন্ন বাহানায় মোটা অংকের টাকা।
তবে এ বিষয় গরিব শাহ দেওয়ানের মাজার শরিফ বানানো ঝাড়ফুঁক মানত গ্রহণে জীবিত অবস্থায় কোনো অছিয়তনামা করেছেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি মুখ খুলতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, আতিয়ার খাদেম পড়েন না ঠিকমতো সালাত। থাকেন না ঠিকমতো রোজা। শরীরের মধ্যে নেই কোনো নবীর সুন্নত। গরিব শাহ্ দেওয়ানের নাম ভাঙিয়ে করেছেন মাঠের জমিসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। টাকা উপার্জনে প্রয়োজনের চাহিদার জোগান নিশ্চিত করতে সাইনবোর্ড অথবা ফেস্টুনে ব্যবহার করেন নিজের মতো করে সম্মানিত ব্যক্তিদের নাম।
আর এভাবে সারাদিন এ সব ব্যক্তির নাম বিক্রি করে সমাজে ছড়িয়ে দিচ্ছেন শিরক এবং ইসলাম বিরুদ্ধে অপপ্রচার। যা কি না ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মনে প্রশ্ন জন্মায়, সেই সাথে শুরু সমালোচনা।
গত ১ আগস্ট মুঠোফোনে সাক্ষাৎকারে ৭ নং ছব্দালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পান্না খাতুন গণমাধ্যমে সাংবাদিকদের জানান, আমি কোনো কৈফিয়ত দিতে পারব না কাউকে। গতকাল শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ খাদেম আতিয়ার রহমানের থেকে ভণ্ডামি এবং রোগী আর না দেখার জন্য মুচলেকা নিয়েছেন।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা গেছে, মাগুরা জেলা পুলিশকে একটি মুচলেকা দিয়েছেন ভণ্ড পীর আতিয়ার রহমান।
৭ নং ছব্দালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পান্না খাতুন গণমাধ্যমে সাংবাদিকদের আরো জানান, তবে শিশুকে লাথি মেরে চিকিৎসা প্রদান, ওরসের নামে টালবাহানা করা ঠিক হয়নি, আর ওই ভিডিও দুবছর আগের। এমনটি বলে মুঠোফোন কেটে দেন।