গোদাগাড়ীতে বিনা দোষে কারাবাস, ১৬ বছর পর মুক্তি

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২, ০৬:১৩ পিএম

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিনা দোষে কারাবাস, ১৬ বছর পর মুক্তি পেয়েছে দুইজন। তাদের প্রতিটি দিন কেটেছে মৃত্যুর আতঙ্কে। রাতের পর রাত কেটেছে নির্ঘুম। আবার কোনো রকমে ঘুম এলে স্বপ্নে দেখতেন তোলা হচ্ছে ফাঁসির মঞ্চে। আবার কখনো মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যেত কনডেম সেলের অন্য কয়েদিদের কান্নায়। সঙ্গে সঙ্গে কান্না জুড়ে দিতেন ইসমাইল এবং সোনারদিও।

হাউমাউ করে তারা বলতেন, ‘আমি নির্দোষ। আমি কেন ফাঁসির আসামি অবশেষে সর্বোচ্চ আদালতে প্রমাণ হয়েছে এ দুজন কোনো দোষ করেননি, তাই মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু এরই মধ্যে জীবনের ১৬টি বছর কেটে গেছে কারাগারে। ১৬ বছরের মধ্যে ১৪ বছর ফাঁসির রায় নিয়ে কাটিয়েছেন কনডেম সেলে। তাও হয়েছে একজনের সঙ্গে সামান্য ঝগড়ার কারণে। কে জানত কারও সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হলেই এভাবে ফাঁসিতে মৃত্যুর প্রহর গুনতে হবে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা জৈটাবটতলা ধয়াপাড়া যৌবন লাইন গ্রাম। ২০০৬ সালের ২০ অক্টোবর এই গ্রামেরই সৌদি প্রবাসী বজলুর রহমানের স্ত্রী মিলিয়ারা খাতুন ওরফে রোকসানা ওরফে মিলু (৩০) এবং তার মেয়ে পারভীন ওরফে শাবনূরকে (৯) গলা কেটে হত্যা করা হয়। সেই মামলায় ফেঁসে গিয়েছিলেন এই গ্রামেরই ইসমাইল হোসেন ওরফে বাবু (৪২) ও মো. সোনারদি ওরফে সোনারুদ্দি (৬০)।

শুক্রবার সকালে বাড়ির সামনেই বসেছিলেন ইসমাইল। তিনি শোনালেন মামলায় ফেঁসে যাওয়ার গল্প। মামলায় মোট আসামি চারজন। এর মধ্যে মুক্তার নামের একজন ঘটনার পর থেকেই পলাতক। হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ তরিকুল ইসলাম নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে। এই তরিকুলই ফাঁসিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে জানিয়েছিলেন, ইসমাইল ও সোনারদি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

ইসমাইল জানান, তরিকুলের ভাগনিকে তিনি বিয়ে করেছিলেন। বনিবনা না হওয়ায় পর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর একদিন তরিকুলের সঙ্গে তার হাতাহাতি হয়েছিল। সেদিন ইসমাইলও তার সঙ্গে ছিলেন। এতটুকু ঘটনার কারণে তরিকুল তাদের ফাঁসিয়ে দিয়েছিলেন। তরিকুল এ হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। এ কারণে সবাইকেই ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়। পরে আপিলে তরিকুলের দণ্ড কমে যাবজ্জীবন হয়েছে।

গ্রেপ্তারের পর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বর্ণনা দেন ইসমাইল। রিমান্ডের দিনগুলো মনে হলে এখনো গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে তার। দুই বছর কারাগারে থাকার পর যখন মৃত্যুদণ্ডের রায় হয় তখন থেকেই শুরু হয় আরেক কষ্টের জীবন। কনডেম সেলে খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে ছোট ছোট কোনো ঘটনায়ও তারা মানসিক নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন বলে জানান, আর সেটা বিনা দোষেই।

এ নিয়ে ইসমাইল বললেন, ‘জেলখানায় আমার মতো অনেক নির্দোষ ব্যক্তি দণ্ড মাথায় নিয়ে দিন গুনছে। আমরা যদি এখন নির্দোষ হয়ে কারও বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে যাই, তা হলে বিচারব্যবস্থায় এর প্রভাব পড়বে। সবাই ভাববে, জেল থেকে বেরিয়েই এরা ঝামেলা করছে। এটা উদাহরণ হিসেবে দেখা হবে। তখন যেসব নির্দোষ ব্যক্তি জেলে, তারা আর বের হতে পারবে না। তাই আমরা কোনো ঝামেলা করতে চাই না। সব ভুলে যেতে চাই। কিন্তু জীবনের ১৬টি বছরের এত কষ্টের কথা তো আর ভুলে যাওয়া যাবে না।

এসএম