লক্ষ্মীপুরের আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়নে

বিরামহীন ছুটে চলা একজন এসপি মাহফুজ্জামান

আলী হোসেন, লক্ষ্মীপুর প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২২, ০৫:৪১ পিএম

জেলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে অবিরাম ছুটে চলেছেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। যেখানেই যাচ্ছেন, তার কর্ম ও পেশাদারিত্বের মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন সর্বত্র। দিনমজুর, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, পথশিশু, কুলি, মুছি, কামার-কুমোর, ফুটপাতের ব্যবসায়ী সবার সাথে হাত মেলাচ্ছেন। মায়ের কোল থেকে নিজের কোলে তুলে নিয়ে পরম স্নেহে আদর করছেন শিশুকে। হাসিমুখে সবার খোঁজখবর নিচ্ছেন। জিজ্ঞেস করেন, কোনো সমস্যা আছে কীনা? সমস্যা থাকলে সাধ্যের মধ্যে চেষ্টা করেন তাৎক্ষণিক সমাধানের। তিনি লক্ষ্মীপুরের এসপি মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ।

গত ২৩ আগস্ট তারিখে লক্ষ্মীপুরে পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে যোগদান করেন, মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ। যোগদানের পরদিন জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন তিনি। স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও খোলামেলা আলোচনা করেন। সাংবাদিকদের কাছ থেকে জেলার সার্বিক বিষয়ে ধারনা নেন। স্মৃতিচারণ করেন, নিজের মুক্তিযোদ্ধা পিতার কথা। স্মরণ করেন, জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ দেশের জন্য আত্মাহুতি দেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। এসময় আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। একজন এসপি হিসেবে সাধারণ মানুষের সেবায় এবং লক্ষ্মীপুরবাসীর নিরাপত্তায় নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দেওয়ার অঙ্গিকার করেন জেলা পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

এরপর থেকেই অবিরাম ছুটে চলেছেন এসপি মাহফুজ্জামান আশরাফ। প্রথমদিনই জেলা শহরের যানজট নিরসনে তীব্র রোদের ঝলকানী উপেক্ষা করে পায়ে হেঁটে পুরো শহরকে একটি শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা শুরু করেন তিনি। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ইজিবাইক, সিএনজিঅটোরিকশার ডানপাশে ব্লক করে যাত্রী উঠা-নামা বন্ধ করে দেন। নির্দেশ দেন, জেলার সর্বত্র পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধের। প্রায় এক সপ্তাহজুড়ে জেলা শহরসহ প্রত্যেকটি উপজেলায় মহাসড়কে যানজট নিরসনে ঝটিকা কর্মসূচি পালন করেন তিনি। এতে জনসাধারণের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করে। গত দেড়মাসে পুলিশ সুপারের এই জনবান্ধব কর্মসূচি পালনের সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে এই জেলার মানুষ। কমে এসেছে মহাসড়কে পরিবহন দুর্ঘটনা, কমেছে যানজট, বন্ধ হয়েছে চাঁদাবাজি।  

পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় মোটরসাইকেল চুরি রোধে আন্তঃজেলা চোরচক্রের সক্রিয় সদস্যদের পাকড়াও করে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। এসময় বিভিন্ন থানায় অন্তত ১০টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার এবং চুরির ঘটনার সাথে জড়িত কমপক্ষে ১৫জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এতে গেল দুইমাসে মোটরসাইকেল চুরি হ্রাস পেয়েছে। অস্ত্রসহ ডাকাত দলের বেশ কয়েকজন সদস্যকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ দিকে ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে হঠাৎ চন্দ্রগঞ্জ থানার বশিকপুরে ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি মো. আলাউদ্দিন দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়। ঘটনাটি শোনার সাথে সাথে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে যান এসপি মাহফুজ্জামান আশরাফ। এরপর এই হত্যাকান্ডের ৩ দিনের মধ্যে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও উল্লেখযোগ্য খুনিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়।

অপরদিকে ১১ অক্টোবর দিবাগত গভীর রাতে উত্তরজয়পুর ইউনিয়নে ঘুমন্ত পরিবারকে পুড়িয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে বসতঘরে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এতে ১৭ বছর বয়সী অন্তঃস্বত্তা এক নারী নিহত ও তার মা এবং ভাই অগ্নিদ্বগ্ধ হয়। পরে রাতেই তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরদিন সকালেই এসপি মাহফুজ্জামান আশরাফ জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ’কে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এই ঘটনারও প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় কাজ করছে পুলিশ।

এসপি মাহফুজ্জামান আশরাফ জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়নে ৬টি থানা এলাকার সকল শ্রেণি পেশার মানুষ ও সূধীজনদের নিয়ে পর্যায়ক্রমে মতবিনিময় সভা করে যাচ্ছেন। এতে পুলিশের সাথে আরো নিবিড় সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে জনগণের সাথে। এসব মতবিনিময় সভায় পুলিশ সুপার বলেন, আপনারা নির্দ্বিধায় আমার সাথে যে কোনো বিষয়ে প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করবেন।      

পুলিশ সুপারের ব্যতিক্রমী কাজের দৃষ্টান্ত:
বিগত দেড়মাসে পুলিশ লাইন্সের মেসে খাবারের মান যাচাই করতে কয়েক দফায় সেখানে পরিদর্শনে যান পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ। মেসে পুলিশ সদস্যের সাথে একসাথে বসেই খাবার খান তিনি।

এ সময় তিনি বলেন, খাবারের মান যেন কোনোভাবে খারাপ না হয়। পুলিশ লাইন্সে যারা খাবার খান- তারা আমাদের ভাই, আমাদের সন্তান। তিনি বলেন, ধনী-গরিব, রিকশাচালকসহ সবাই আমরা মানুষ। আর মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই।

লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, আপনারা পুলিশকে নিজের বন্ধু ভাবুন। পুলিশ শুধু জনগণের বন্ধুই নয়, সেবকও। পুলিশ সবসময়ই জনগণের বন্ধু হিসেবে পাশে ছিল এবং আগামীতেও থাকবে। আপনাদের সহযোগিতায় আমরা লক্ষ্মীপুরকে সত্যিকারের লক্ষ্মী জেলায় রূপান্তর করতে চাই।

কেএস