তাজরীন ট্রাজেডি’র ১০ বছর আজ

আশুলিয়া প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২২, ০৩:৩২ পিএম

সাভারের আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকান্ডের ঘটনার ১০ বছর পূর্তি হলো আজ কিন্তু শেষ হয়নি নিহতের পরিবারের আহাজারি ও আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা সেবার আকুতি। বিভিন্ন মাধ্যমে সামান্য সহযোগিতায় কিছুটা স্বস্তি পেলেও আতঙ্ক কাটেনি শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়া শ্রমিকদের। অনেকটা অবহেলার মধ্য দিয়ে এখন তাদের জীবন কাটছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে পোশাক তৈরি কারখানায় অগ্নিকান্ডে একসঙ্গে এতো শ্রমিকদের হতাহতের ঘটনা এটাই প্রথম। যে কারণে এই দিন রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় শোক পালনের পাশাপাশি সারা দেশের পোশাক কারখানা গুলোকে ছুটি ঘোষণা করা হয়।

২০১২ সালে ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকার তোবা গ্রুপের তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেড এ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছিলো। এ ঘটনায় ১১২ জন শ্রমিক জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যান। আহত হন ১০৪ জন। গার্মেন্টস কারখানাটিতে এক হাজার ১৬৩ শ্রমিক কাজ করতেন। কিন্তু দুর্ঘটনার সময় ৯৮৪ শ্রমিক সেখানে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও ভয়াবহ এ অগ্নিকান্ডে পুড়েছে কারখানার সকল মালামাল ও সম্পূর্ণ ভবনটি। সেই পুড়ে যাওয়ার ছাপ এখনো ভবনের চার পাশে লেগে আছে। সেদিনের পর থেকে ভবনটির কার্যক্রম একেবারেই বন্ধ হয়ে গেলেও পুড়ে যাওয়া ৮ তলা ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে দাড়িয়ে আছে। ভবনটি নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা সহ ভবনের আশে পাশের বাড়িওয়ালারা।

বুধবার (২৪নভেম্বর) সকালে পুড়ে যাওয়া ভবনটির সামনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির প্রধান গেটে তালা ঝুলানো। এখানো ভবনটির প্রত্যেক জানালায় আগুনের ছাপ লেগে আছে।

এ ভবনটি নিয়ে আতঙ্কে দিন পাড় করা চা দোকানী হাবিবুর রহমান বলেন, কারো যদি মেরুদণ্ড ভেঙে যায় তাহলে কি সে দাড়াতে পারে? পারে না। আমি মনে কি এই ভবনটির মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। এই ভবনের কারণে আরও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই এই ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা উচিত।

ভবনটির পূর্বপাশের বাড়িটির মালিক আমিন গাজী ও শহিদ গাজী নামের দুই ভাই। বাড়িটিতে তারসহ আরও ২৫টি পরিবারের বসবাস। তারা জানান, ঘটনার সময় ওই বাড়ির টিন সেড ঘরের প্রায় ১৫ টির রুম পুড়ে গেছে। আমরা সব সময় আতঙ্কে থাকি কখন না আবার কোনো দুর্ঘটনা ঘটে। তাই আমাদের দাবি এই ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা হোক।

তাজরীনের আগুনে পুড়ে যাওয়া আহত শ্রমিক জরিনা বলেন, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় যে সমস্ত আহত শ্রমিক রয়েছে তাদের জন্য এই ভবনটি ভেঙে পুনর্বাসন করে দেওয়া হক। যাতে আহত শ্রমিকরা ও নিহত শ্রমিকের পরিবার থাকতে পারে।

এ বিষয়ে শ্রমিক নেতা সরোয়ার হোসেন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ আগ্নিকান্ডে পুরে যাওয়া ভবনটি ভেঙে বা সংস্কার করে এখানে তাজরীনের আহত শ্রমিক ও নিহত শ্রমিকদের পারিবারের বাসস্থান করে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। কিন্তু আমাদের এই দাবির কোনো প্রতিফলন দেখছি না। অন্যদিকে এই মামলার বিচার কার্য থেমে আছে, তারও কোনো অগ্রগতি দেখছি না।

অন্যদিকে ভয়াবহ ওই ঘটনার পরদিন আশুলিয়া থানার এসআই খায়রুল ইসলাম অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগ এনে মামলা করেন। মামলা দায়েরের ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি বিচারকাজ। তবে রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে, খুব দ্রুতই শেষ হবে বিচারকাজ।

বর্তমানে মামলাটি ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দিলারা আলো চন্দনার আদালতে বিচারাধীন। সর্বশেষ গত ১৮ মে মামলাটিতে দুজন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেন। তারা হলেন, পোশাক শ্রমিক হালিমা খাতুন ও সুপারভাইজার সিরাজুল ইসলাম। এরপর থেকে আর কোনো সাক্ষী আদালতে আসেননি। গত ২৪ অক্টোবর এ মামলার অভিযোগপত্রের ৯৮ থেকে ১০৩ সাক্ষীর প্রতি সমন ইস্যু করেন আদালত। আগামী ১ জানুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে। এখন পর্যন্ত মামলাটিতে ১০৪ সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।

জানা যায়, ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত তাজরীন ফ্যাশন এর মালিক মো. দেলোয়ার হোসেন তার মেয়ে তাজরীনের নামানুসারেই প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করেছিলেন।

এসএম