নালিতাবাড়ীতে নতুন জাতের ধান উদ্ভাবক সেন্টু হাজং

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২২, ০৩:১৯ পিএম

শেরপুর জেলার মেঘালয়ের পাদদেশ নালিতাবাড়ী অন্ধারুপাড়া গ্রামের সেন্টু হাজং নতুন নতুন জাতের ধান আবিষ্কার করে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন। সেন্টু হাজং স্থানীয় মানুষদের কাছে এই সেন্টু হাজং ধান গবেষক (বিজ্ঞানী) হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।

দেড় যুগে প্রাণপণ চেষ্টায় বিলুপ্ত প্রায় দেশি জাতের ধান ব্রিডিং ও শঙ্করায়ন করে ২৩ ধরনের নতুন জাতের ফলনশীল ধান উদ্ভাবন করেছেন সেন্টু হাজং।

চলতি বছর তার সংরক্ষিত সেন্টু পাইজাম ও আতপ বীজ ধান সরবরাহ করে কৃষকরা বপন করে ভালো ফলন ও বাজার মূল্য পাওয়ার ফলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে সেন্টু বাড়ীতে দেখা যায় দুটি ভাঙা টিনের ঘর। একটি ঘরে তিনি বসবাস করেন। অন্য ঘরটি গোয়াল হিসেবে ব্যাবহার করেন। সেই গোয়াল ঘরে একটি ড্রামের ভিতর ছোট ছোট আটি বেঁধে ধান সংরক্ষণ করেন। সেখান থেকে বাছাই করে নিজের জমিতে ছোট ছোট ৩৭০টি প্লট করে এ বছর বীজ বপন করে রেখেছেন।

তারপর তিনি বীজ ধান নিজের জমিতে ছোট ছোট ছোট প্লট করে ব্রিডিং ও শঙ্করায়ন পদ্ধতিতে আবিষ্কার করছেন উচ্চফলন শীল বিভিন্ন জাতের নতুন ধান।

এ পর্যন্ত তিনি ২৩টি নতুন জাতের দেশি আমন জাতের ধান আবিষ্কার করছেন। একটি নতুন জাতের ধান আবিষ্কার করতে তার সময় লাগে প্রায় ৭ বছর। স্থানীয় কৃষকদের কাছে সব গুলো ধান তার নামেই পরিচিতি লাভ করেছে।

চলতিবছর সেন্টু ২৩(আতপ) ধান নতুন করে আরো উন্নত চিকন ও ছোট ধান উদ্ভাবন করেছেন সামনের মৌসুমে কৃষকরা উৎপাদনের জন্য তার সংরক্ষিত  বীজ কিনে নিচ্ছেন।

তিনি জানান, সামনের বছর আমন আবাদের জন্য তিনি এই নতুন জাত বাজার জাত করবেন। তিনি বলেন, দেশি জাতের ধানে এমনিতেই পোকার আক্রমণ কম হয়। জৈবসার ব্যবহারের ফলে ধানের উৎপাদন খরচও কম পড়ে। নিজে কৃষক হওয়ার সুবাদে এই কাজে তিনি বেশ আনন্দ ও তৃপ্তিপান।

সেন্টু হাজং স্থানীয় কৃষিতে তার সামান্য অবদান রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার স্ত্রী, শাশুড়ি ও এক ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে পরিবার। সন্তানরা লেখাপড়া করছেন। তার গবেষণার কাজে সবসময় সহায়তা করেন স্ত্রী অবলা রাণী হাজং।

উপজেলার চাঁদগাও গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম সুজন(৪৫)বলেন, আমি এ বছর আমার ৫ একর ১৫ শতাংশ জমিতে সেন্টুর আবিষ্কার করা আতপ সেন্টুশাইল জাতের ধান আবাদ করেছিলাম। শুকিয়ে একর প্রতি ৫০-৫৫ মণ হারে ফলন পেয়েছি। প্রতি একর খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। সেন্টু শাইলের বর্তমান বাজার দর ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকা প্রতিমণ।

একই এলাকার অপর কৃষক আরিফুল ইসলাম (৪২) বলেন, আমি এবার ৩ একর ১০ শতাংশ জমিতে সেন্টু পাইজাম ধান লাগিয়ে ছিলাম। শুকিয়ে ৪০-৪৫ মণ হারে ফলন পেয়েছি। এই জাতের ধানের বর্তমান বাজার দর ১৪০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা প্রতিমণ। ফলন ভালো হওয়ায় প্রতিবছর সেন্টু শাইল ও সেন্টু পাইজাম ধান আমি আবাদ করি।

ধান ব্যবসায়ী মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, বাজারে বর্তমানে সেন্টু পাইজাম ও ইন্ডিয়ান পাইজাম ধান ব্যাপকহারে আসায় আমরা সে ধানই কিনছি। তবে সেন্টু পাইজাম ধানের চাহিদা বেশী। আর সেন্টু আতপ এখন শেষের দিকে। আতপ ধান আমরা ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকায় কিনেছিলাম।

উদ্ভাবক সেন্টুহাজং বলেন, ২০০৫ সালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশি জাতের বিলুপ্তপ্রায় বগি, হালই, গোলাপি, মালঞ্চি, ময়নাগিড়ি, মালসিরা, অনামিয়া, পারিজাত, আপচি, কাইশাবিন্নি, মারাক্কাবিন্নি, শংবিন্নি, দুধবিন্নি, বিরই, চাপাল, খাসিয়াবিন্নি, পুরা বিন্নিসহ বেশ কয়েক ধরনের আমন জাতের ধান ৪০০ প্লট করে বীজ সংরক্ষণ করে যাত্রা শুরু করেন।

নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর কবীর বলেন, কৃষক সেন্টু হাজং নিজ উদ্যোগে দেশি জাতের ধান উদ্ভাবন করে নালিতাবাড়ীতে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। স্থানীয় ভাবে কৃষিতে অবদান রাখারজন্য জন্য উদ্ভাবক হিসেবে তিনি যেন পুরস্কৃত হন তার নাম কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এসএম