বরেন্দ্রর মাটিতে চাষ হচ্ছে দার্জিলিংয়ের কমলা

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২২, ০৪:১২ পিএম

বরেন্দ্র অঞ্চল খ্যাত রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে প্রথমবারের মত চাষ হচ্ছে দার্জিলিং কমলার। ফলন ও দামে খুশি কৃষক নজরুল ইসলাম। বরেন্দ্রের শুষ্ক মাটিতে এর আগে অনেকেই কমলা চাষের চেষ্টা করেছেন। তাদের কমলায় রস হয়নি, মিষ্টিও হয়নি। তবে এই দুর্ভাবনা এখন দূর হয়েছে। কমলায় রস হয়েছে, মিষ্টিও ভালো।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানাযায়, উপজেলায় সাড়ে তিন হেক্টর জমিতে দার্জিলিং জাতের কমলার চাষ হয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর গোদাগাড়ী উপজেলার মাছমারা নজরুল ইসলামের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে গাছে পাকা কমলা ঝুলছে। দৃষ্টিনন্দন এই কমলা খেতেও বেশ সুস্বাদু। বাজারের কিনতে পাওয়া লেবুর থেকে আকৃতি ও স্বাদ অপেক্ষাকৃত ভালো। এরিমধ্যে তার বাগান পরিদর্শন করেছেন কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তারা। বাগানে বসে আয়-ব্যয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়।

তিনি বলেন, ২০২০ সালের জুন মাসের শেষের দিকে তিনি চারা রোপণ করেন। প্রতিটি গাছের দাম ২১৫ টাকা। প্রতি বিঘা জমির ইজারা মূল্য বছরে ১০ হাজার টাকায় নিয়ে আড়াই বিঘা জমিতে ২৫০টি দার্জিলিং কমলার চারা রোপণ করে। এতে এ যাবত খরচ হয় ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা।

কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, দার্জিলিং কমলার বাগান থেকে ব্যবসায়ীরা ১৫০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছর বিক্রি করে আয় হয়েছে ১লক্ষ ৬০ হাজার। আগামী বছর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ব্যাপক সাফল্য যাবে বলে তিনি আসা করেন। নজরুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ এসে তিনি গ্রামে ফিরে কৃষিকাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি কমলার চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন। চুয়াডাঙ্গা থেকে কমলার চারা এনে আড়াই বিঘা জমিতে লাগান।

কমলা বাগান পরিচর্যা নিয়ে নজরুল ইসলাম জানান, কমলার বাগান করতে তেমন কোনো কষ্ট করতে হয় না। তবে জমির চারপাশে ভালো করে বেড়া তৈরি করতে হয়। ৫ বছর পর একটি গাছ ফল ধরার জন্য পরিপূর্ণতা লাভ করে। প্রতিটি গাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত ভালোভাবে ফল পাওয়া যাবে। এছাড়া অনাবৃষ্টির সময়ে গাছে সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। আগাছা পরিষ্কার রাখতে হয়। গাছে ফল আসলে ভোমরা ও মাছিসহ বিভিন্ন পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে গেলে বাড়তি নজরদারি করতে হয়।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি মরিয়ম আহমেদ বলেন, কৃষক নজরুল ইসলাম চেষ্টা করছেন সম্ভাবনাময় এ চাষকে সম্প্রসারণ করতে। এরিমধ্যে অনেক কৃষক এই কমলা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তারা তাদের সাধ্যমত সহযোগীতার চেষ্টা করছেন। তবে বাণিজ্যিকভাবে দার্জিলিং জাতের কমলার চাষ এবারই প্রথম। 
তিনি বলেন, নজরুল ইসলামের বাগানে উৎপাদিত কমলা খেতে বেশ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। ফলের আকারও তুলনামূলকভাবে বড়। তাছাড়া প্রতিটি গাছে ধরেছে অনেক। সম্ভাবনাময় এ কমলার চাষ বাণিজ্যিকভাবে দেশের কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে দেশের কৃষক। অন্যদিকে পুষ্টি চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে বলেও মত দেন এই কর্মকর্তা।

এসএম