নওগাঁর রাণীনগরে চাষ হচ্ছে সৌদির খেজুর

আবু ইউসুফ, নওগাঁ প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০২৩, ১২:২১ পিএম

ইউটিউব দেখে অবাস্তবকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলার কৃষক আব্দুল মজিদ। ৩০ শতাংশ জমিতে গড়ে তুলেছেন সৌদি আরবের খেজুরের বাগান। তার গাছগুলোতে ফল ধরেছে। কিছুদিন পরই হবে খাওয়ার উপযোগী। 

মরুর এই সুমিষ্ট খেজুর নিজের আঙিনাতে ফলাতে পেরে খুশির শেষ নেই এই কৃষকের। এ কাজে আব্দুল মজিদ অভিজ্ঞতা নিয়েছেন ইউটিউব থেকে। চাষাবাদের পদ্ধতি, বীজ থেকে কীভাবে চারা করতে হয় এবং রোপণ করতে হয়-সবই পেয়েছেন এই ভিডিও প্ল্যাটফর্মে। 

উপজেলার পারইল ইউনিয়নের বিলকৃষ্ণপুর ধোপাপাড়া গ্রামের আব্দুল মজিদ জানান, একটানা ২০ বছর তিনি সৌদি আরবে ছিলেন। সেখানে থাকতেই ইউটিউবে বাংলাদেশে খেজুর চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হন। প্রায় তিন বছর আগে দেশে আসার সময় সৌদি থেকে মরিয়ম ও আজওয়া দুই জাতের খেজুরবীজ নিয়ে আসেন তিনি।

সেই বীজ দিয়ে শুরু করেন নার্সারি। গড়ে তোলেন খেজুর বাগান। অল্প দিনেই সৌদি খেজুরের বাগান করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন মজিদ। তার বাগান দেখে এখন অনেকেই বাগান তৈরী করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। মজিদের খেজুর বাগানে গিয়ে দেখা যায়, তার বেশির ভাগ গাছ খেজুর ধরার উপযোগী হয়ে উঠেছে।

এরই মধ্যে বাগানের কিছু গাছে মোচা ও খেজুর ধরেছে। বাগানের ঘন সবুজ রং দৃষ্টি কাড়ছে সকলের। ২০২০ সালে সৌদি আরব থেকে বীজ নিয়ে আসেন আব্দুল মজিদ। সেই বীজ থেকে চারা উৎপাদন করেন। নার্সারি থেকে বিক্রি করা হচ্ছে খেজুরের চারাও। বর্তমানে তার নার্সারিতে সৌদির মরিয়ম ও আজওয়া দুই জাতের খেজুরের চারা রয়েছে। 

যে খেজুর সৌদিতে চাষ হয়, সেই খেজুর এই প্রথম চাষ হচ্ছে রাণীনগরে। এই দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন অনেকে ছুটে আসছেন মজিদের গড়ে তোলা বাগানে। এতে গ্রামের আরও কৃষক খেজুর চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। বাগান করার জন্য অনেকেই তার চারা নেওয়ার জন্যে যোগাযোগ করছেন। 

স্থানীয় অনেকেই বলেন, আমরা দেশের মাটিতে কখনও বিদেশি খেজুর চাষ দেখিনি। এবারই প্রথম দেখলাম। তিনি যদি খেজুর চাষে সফল হন, তাহলে আমরাও বাগান করে খেজুর চাষ করব। 

আব্দুল মজিদ বলেন, ‘মানুষের ইচ্ছা ও পরিশ্রম তার ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারে। সে উদ্যম নিয়েই নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। ৩০ শতাংশ জমির বাগানে সৌদির মরিয়ম ও আজওয়া দুই জাতের খেজুর চাষ করেছি। কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করলে ব্যাপক পরিসরে খেজুর চাষ ছড়িয়ে দেয়া যাবে। এখন আর বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছা নেই। 

এ দেশের মাটিতে বিদেশি ফল ফলিয়ে আয় করা সম্ভব। এছাড়াও খেজুরের বাগান থেকে নিজ পরিবার ও আত্বীয়দের চাহিদা মিটিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যাপক লাভবান হওয়া সম্ভব। এছাড়াও রাণীনগর উপজেলাসহ সারা দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই খেজুরের চাষ হলে একদিকে আর্থিক লাভবান হওয়া যাবে অপরদিকে দেশের বেকারত্ব দূর করবে বলেও দাবি করেন তিনি। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহিদুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় এই প্রথম একজন কৃষক সৌদির সুমিষ্ট খেজুর চাষ করছেন। তার গাছে খেজুরও ধরেছে। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করব এবং এই খেজুর চাষ সম্প্রসারণের জন্য কাজ করব।

এমএইচআর