পোস্টারে ছেয়ে গেছে গোটা বরিশাল নগরী

বরিশাল ব্যুরো প্রকাশিত: জুন ১, ২০২৩, ০৪:২৮ পিএম

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৬৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মাঝে নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে গত ২৬ মে। এদের মধ্যে সাতজন মেয়র প্রার্থী, ১১৬ জন সাধারণ কাউন্সিলর এবং ৪২ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর। প্রতীক পাওয়ার পর পরই আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণায় নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা। 

প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভোট চেয়ে চলছে মাইকিং। এক প্রার্থীর প্রচার গাড়ি না যেতেই হাজির হচ্ছে আরেক প্রার্থীর প্রচার মাইক। প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। শুধু তাই নয়, প্রতীক প্রদানের একদিনের মধ্যেই প্রার্থীদের পোস্টার আর ব্যানারে ছেয়ে গেছে শহরের প্রতিটি অলিগলি। 

এক প্রকার পোস্টারের শহরে রূপ নিয়েছে বরিশাল। পোস্টার-ব্যানার প্রার্থীদের পরিচয় যেমন তুলে ধরছে, তেমনি নগরজুড়ে নির্বাচনের অবয়ব সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছেন ভোটাররা। সরেজমিনে নগর ঘুরে দেখা গেছে, ‘শহরের সদর রোডের রাজপথসহ প্রতিটি অলিগলিতে মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাদা-কালো পোস্টার সাটানো হয়েছে। 

দড়ি দিয়ে পোস্টার বেঁধে তা ঝুলানো হয়েছে রাস্তার ওপর। আবার নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত প্রার্থীদের সাদা-কালো ব্যানার লাগানো হয়েছে রাস্তার পাশে। লেমিনেটিং করা হয়েছে ঝুলন্ত পোস্টারগুলো। এর ফলে বৃষ্টির পানিতেও নষ্ট হচ্ছে না পোস্টারগুলো। নগরবাসী জানিয়েছে, ‘২৬ মে শুক্রবার সকাল ১১টার পর থেকেই প্রধান সড়কসহ প্রতিটি অলিগলিতে পোস্টার-ব্যানার লাগানো শুরু হয়। 

এ ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে ছিলো ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী। তাঁর অনুসারীরা প্রতীক বরাদ্দের পর পরই নগরজুড়ে পোস্টার সাটিয়েছেন। তবে সন্ধ্যার মধ্যেই সকল প্রার্থীর ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরী। আর একদিনের মাথায় পোস্টারের নগরীতে পরিণত হয়েছে বরিশাল শহর। সরেজমিনে দেখা গেছে, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে মেয়র পদপ্রার্থীসহ অন্তত ১২-১৬ জন প্রার্থী পোস্টার সাটিয়েছেন। 

এর ফলে রাস্তা-ঘাটে নতুন করে পোস্টার সাটানোর জয়গা খুঁজে পাওয়াটা এখন দুস্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও সব মেয়র প্রার্থীর পোস্টার-ব্যানারের দেখা মেলেনি। দলীয় মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর পোস্টার-ব্যানারই দৃষ্টি কাড়লেও জাকের পার্টির মো. মিজানুর রহমানের গোলাপ ফুলের পোস্টার চোখে পড়ছে না। 

আবার ‘টেবিল ঘড়ি’ প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুল আহসান রূপন এবং হরিণ প্রতীকের মো. আলী হোসেন হাওলাদারের পোস্টার-ব্যানার দেখা গেলেও ‘হাতি’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করা মো. আসাদুজ্জামানের পোস্টার দেখা যাচ্ছে না। 

সিটি করপোরেশনের ভোটাররা বলছেন, ‘পোস্টারে থাকা অনেকেই প্রার্থীই ভোটারদের কাছে অপরিচিত। ছবিতেই তাদের প্রথম দেখা যাচ্ছে। তবে পোস্টার-ব্যানার নয়, যোগ্য প্রার্থী দেখেই ভোট দিবেন ভোটাররা। এমনটিই দাবি ভোটারদের। এদিকে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার খবর না পাওয়া গেলেও, মোটরসাইকেল মহড়া দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে আচরণবিধি ভঙ্গ করার অভিযোগ রয়েছে। 

তবে নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখতে প্রশাসনিক নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের তৎপরতা বাড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সেইসঙ্গে নির্বাচনী বিধি মেনে চলার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সবাই নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনে চলবেন। 

আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে সচেষ্ট থাকবো। যেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনে অপরাধ রোধ এবং আচরণ বিধি প্রতিপালনের জন্য ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন। 

এদিকে বহিরাগতদের নির্বাচনী কাজের অনুমতি দেওয়া হবে না জানিয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা এরইমধ্যে চেকপোস্ট বসিয়েছি, সেখান থেকে বেশ কিছু যানবাহন আটক করেছি। চেকপোস্টের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। যারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ বা মাস্তানি করতে পারে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

মাঠে আমাদের বিশেষ শাখার পুলিশ সদস্যরাও কাজ করছেন। তাই সবাইকে বিধি মেনে চলার জন্য বলছি, বিশেষ করে টাকা-পয়সা দিচ্ছে এমন কাউকে পেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে  সোমবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যবহৃত ১৫শ’ ইভিএম ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বরিশাল এসে পৌঁছেছে। 

বরিশাল শিল্পকলা একাডেমিতে রাখা হয়েছে এসব মেশিন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি নির্বাচন আইন অনুযায়ী শতভাগ সুষ্ঠু বলে জানান তিনি। 

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর মেয়র পদে ৭ জন অংশ নেবেন। এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৯ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন। নির্বাচনে ১২৬টি কেন্দ্রের ৮৯৪ কক্ষে দুই লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ ভোটার ভোট দেবেন।

এইচআর