মিঠাপুকুরে ইউপি চেয়ারম্যানকে মামলার আসামি করলেন ইউপি-সদস্য

মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৩, ০৭:৪৪ পিএম

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার কাফ্রিখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান- জয়নাল আবেদিন মাষ্টারকে রাস্তার গাছ কর্তন করার অভিযোগে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন একই ইউনিয়নের এক ইউপি-সদস্য। 

মঙ্গলবার (২২) আগষ্ট মিঠাপুকুর থানায় দু‍‍`জনকে আসামি করে মামলাটি করেন ৬ নং কাফ্রিখাল ইউনিয়নের ০৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুন্নবী মিয়া।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মিঠাপুকুর উপজেলার ০৬, নং- কাফ্রিখাল ইউনিয়নের আওতাধীন বুজরুক মহদিপুর ব্যাপারি পাড়ায় "বুজরুক মহদিপুর বেপারীপাড়া যুব উন্নয়ন সমিতি " ২০০৮ সালে ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে একটি চুক্তি করে রাস্তার দু‍‍`পাশে ১৫ বছরের জন্য ইউক্লিপটাস গাছ লাগান। চুক্তির শর্তানুসারে সুবিধাভোগী সদস্যরা সমিতির উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট কাজে গাছের বিক্রয়কৃত অর্থ ৭৫% পাবেন। আর বাকী ২৫% ইউনিয়ন পরিষদের কোষাগারে জমা হবে।

চুক্তির শর্তানুযায়ী গত-৩০ জুন ২০২৩ ইং গাছ লাগানোর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। সুবিধাভোগী সদস্যরা মিটিং অনুযায়ী রেজুলেশন মূলে চেয়ারম্যানের কাছে গাছ কাটার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন মাষ্টার অসুস্থ থাকায় তিনি বিষয়টি নিয়ে কোনো নির্দেশনা দিতে পারেননি। পরে সুবিধাভোগী সদস্যরা চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে ঐ ইউনিয়নের ইউপি-সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এসময় কয়েকজন ইউপি-সদস্য জানান, যেহেতু চেয়ারম্যান হাসপাতালে আছে সেহেতু গাছ বিক্রি করলে তাদের কিছু টাকা দিতে হবে এবং তারা গাছ কাটার নির্দেশ দেন।

চেয়ারম্যান-জয়নাল আবেদিন (মাষ্টার) হার্টের অপারেশন জনিত কারনে ঢাকায় অবস্থানকালে অভিযুক্ত ইউপি সদস্যদের নির্দেশে গত- শুক্রবার (১৮,আগষ্ট) বিক্রিত গাছগুলো শ্রমিক দিয়ে কর্তন করেন গাছের বেপারি। পরে চেয়ারম্যান ঢাকা থেকে গাছ কর্তন এবং বিক্রির বিষয়টি জানতে পারলে গাছ কর্তনের নিষেধ করেন এবং গাছগুলো ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

গাছ বোঝাই ট্রলি আটক করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়া হলে পরিস্থিতি ঘোলাটে বুঝে গাছ বিক্রির টাকা যারা নিয়েছিলেন তাদের কাছ থেকে "বুজরুক মহদিপুর বেপারীপাড়া যুব উন্নয়ন সমিতির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক‍‍` ফেরত নিয়ে চেয়ারম্যানের পরিবারে জমা রাখেন। গাছ বিক্রির টাকা ফেরত নেওয়ায় সুবিধাভোগী ইউপি-সদস্যরা চেয়ারম্যানের উপর ক্ষীপ্ত হয়ে উঠেন। তারা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন।

বুজরুক মহদিপুর বেপারীপাড়া যুব উন্নয়ন সমিতির সভাপতিঃ মহসিন আলী জানান, আমরা মসজিদের উন্নয়নে গাছ বিক্রি করেছিলাম। চেয়ারম্যান এসব বিষয়ে কিছু জানেনা। হার্টের অপারেশন জনিত কারনে তিনি ঢাকায় ছিলেন। যারা গাছ কাটার নির্দেশ দিয়েছিলেন তারাই মামলা করেছেন। সাধারণ সম্পাদক- বাবলু মিয়া জানান, গাছ কাটার নির্দেশ চেয়ারম্যান দেয়নি। অযথা একটি লোককে হয়রানি! হয়তোবা ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন বরাদ্দ নিয়ে তাদের মনোমালিন্য ছিলো,এটা তারই বহিঃপ্রকাশ।

চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন মাষ্টার জানান, আমার হার্টের অপারেশন শেষে আমি গত-সোমবার (২১ আগষ্ট) ঢাকা থেকে নিজ বাড়িতে এসেছি। রাতে পুলিশ বাড়িতে এসেছিল। আমার নামে ইউপি-সদস্য নুরুন্নবী বাদী হয়ে গাছকাটা মামলা দায়ের করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ নিয়ে ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত আক্রোশে তিনি এমন কাজটি করেছেন। জামিন হয়ে আসার পর বিষয় নিয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো। পুলিশ কোনরূপ তদন্ত না করে মামলা রেকর্ড করায় তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে উক্ত মামলার বাদী এবং অভিযুক্ত ইউপি-সদস্য নুরুন্নবী (মেম্বারের) সাক্ষাতের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তার ব্যবহৃত নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোস্তাফিজার রহমান আমার সংবাদকে জানান, ইউপি সদস্য বাদী হয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে।

আরএস