পেকুয়ায় ‘হামুন’র থাবায় ২ হাজার বাড়িঘর বিধ্বস্ত

পেকুয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২৩, ০৮:৩০ পিএম

ঘুর্ণিঝড় ‘হামুন’র তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা। গত মঙ্গলবার রাতে হামুনের আঘাতে প্রায় দুই হাজার বাড়িঘর ভেঙে গেছে। গাছপালা ভেঙে গেছে প্রায় ৫ হাজার। গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে সড়কের উপরে উপড়ে পড়ায় বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। দেখা দিয়েছে তীব্র বিশুদ্ধ পানির সংকট। তবে এখনো পর্যন্ত কোন ধরণের হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

উপজেলার উপকূলীয় এলাকা উজানটিয়া ও মগনামা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, উজানটিয়ার খাতুনে জান্নাত ইবতেদায়ী মাদরাসার তিনটি ভবনের টিনের ছাদের সম্পূর্ণ উড়ে গেছে। একই পরিস্থিতি ঘটেছে মগনামার শাহ রশিদিয়া আলিম মাদরাসাতেও। এ মাদরাসার একটি একাডেমিক ভবনের সবগুলো টিন উড়ে গিয়ে ব্যঘাত সৃষ্টি হচ্ছে পাঠদানে।

খাতুনে জান্নাত মাদরাসার অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম বলেন, তিন মাস আগেই সংস্কার করা হয়েছে পুরো মাদরসার সবকটি ভবন। হামুন ঝড়ে ছাদের সকল টিন উড়ে গেছে। দুর্গাপূজার ছুটির পর আজ (বৃহস্পতিবার) মাদরাসার পাঠদান ফের শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা তা করতে পারিনি।

এদিকে গাছ পড়ে বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে যাওয়া এবং বৈদ্যুতিক খুটি ভেঙে যাওয়ায় ঝড়ের পর থেকে পুরো উপজেলায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। এতে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবন।

কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পেকুয়া সাব-জোনাল অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৫৭টি বৈদ্যুতিক খুটি হামুন ঝড়ে ভেঙে গেছে। হেলে পড়েছে ৭০টি। এছাড়া কেন্দ্রীয় সংযোগের ২০০ মিটার তার ছিড়ে গেছে।

পেকুয়া সাব-জোনাল অফিসের এজিএম দীপন চৌধুরী বলেন, হামুন ঝড়ে পেকুয়ার বিদ্যুৎ ব্যবস্থার যে অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা সংস্কারের কাজ শুরু করেছি আমরা। দ্রুত সবকিছু স্বাভাবিক করতে অতিরিক্ত ৫০জন জনবল একসাথে কাজ করছে। তবে বৈদ্যুতিক সংযোগ চালু করতে আরও ২-৩ দিন সময় লাগতে পারে।

ঝড়ে পেকুয়া উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সহায়তায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ১৬টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার আবু তাহের।

তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে ১৬ টন চালের মধ্য থেকে উজানটিয়া ও মগনামা ইউনিয়নের জন্য তিন টন করে ও অন্যান্য প্রতি ইউনিয়নের জন্য দুই টন করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের একটি তালিকা আমরা প্রস্তুত করেছি। এদের সহায়তার জন্য প্রস্তাবনাটি জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠানো হয়েছে।

পেকুয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাহদুর শাহ বলেন, হঠাৎ ঘুর্ণিঝড় হামুন পেকুয়াকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। বাতাসের তীব্রতা এতো বেশি ছিল যে মুহুর্তের মধ্যে সবকিছু ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। হামুনের থাবায় প্রায় দু‍‍`শ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক ভেঙে গেছে প্রায় চারশো বাড়ি। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ রয়েছে।

মগনামা ইউপির চেয়ারম্যান ইউনুস চৌধুরী বলেন, তাঁর ইউনিয়নে প্রায় পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর ভেঙে গেছে। বাতাসে ৪২টি বাড়ি সম্পন্ন উড়ে নিয়ে গেছে। শতশত গাছপালা ভেঙে উপড়ে পড়েছে সড়কে। তবে লোকজন দিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা গাছপালা সরিয়ে ফেলেছি।

উজানটিয়া ইউপির চেয়ারম্যান তোফাজ্জল করিম বলেন,ঘুর্ণিঝড় হামুন আমার ইউনিয়নে তান্ডব চালিয়েছে। ২৫০টি কাঁচা বাড়ির চিহ্নও রাখেনি। প্রায় দু‍‍`শ ঘরবাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ১০টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে। হেলে পড়েছে অসংখ্য খুঁটি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাদ্দকৃত তিন টন চাল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে বিলি করেছি।

এআরএস