আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কৃষকের ধান ও গাছ কেটে নিল সাবেক ইউপি সদস্য

মাগুরা প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৩, ০৫:২১ পিএম

মাগুরা সদরের বাবুখালী ইউনিয়নের চুড়ারগাতী গ্রামের ওয়াজেদ মেম্বার  আদালতের ১৪৪-১৪৫ ধারার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জোর পূর্বক এনায়েত হোসেন (৭০)নামের এক বৃদ্ধ কৃষকের জমির পাকা বোরো ধান কেটে নিয়ে গেছেন বলে মর্মে অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার ২ নভেম্বর সকালে চুড়ারগাতী মৌজার ১৭২ নং খতিয়ানের ৭৫৪,৭৬৯,৭৫৮,৭৭১,৭৭২ নং দাগের মধুমতী নদী সংলগ্ন ১৭ একর ২০ শতাংশ জমির ৯০ শতাংশ জমির পাকা বোরো ধান কেটে নিয়ে গেছে একই গ্রামের বাসিন্দা শওগত ওসমান এর নেতৃত্বে সাবেক মেম্বার ওয়াজেদ । এঘটনায় দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করলেও পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ধান ও অভিযুক্তদের আটক করতে সক্ষম হয়নি।

তবে এ বিষয়ে,অভিযুক্ত সাবেক ইউপি মেম্বার শওকত ওসমান এর নেতৃত্বে বিরোধপূর্ণ ওই জমির কিছু ধান কেটে নিয়ে আসার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এখানে মোট ৯০ শতাংশ ভুমি আমার চাচার। তবে তিনি জমির কোন দলিল দস্তাবেজ বা রেকর্ডের কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। এ সময় তিন পাক সরবাজ মৌজা বলে দাবি করেন। তবে বাংলাদেশের ম্যাপে কোথাও পাকসারবাজ মৌজা পাওয়া যায়নি। কোথায় এ মৌজা পেলেন, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন, আমাদের কোন কাগজ লাগেনা। জোর করে জমির ফসল কেটেছি আরো কাটবো পারলে পুলিশ, প্রশাসনকে ঠেকাতে বলেন।

জানা গেছে,১৯১৭ সাল থেকে জমিটি সোনাউল্লাহ ফকিরের পৈতৃক সম্পত্তি, তাদের নামে রয়েছে সি,এস রেকর্ড, এস,এ,রেকর্ড এবং সর্বশেষ হাল রেকর্ড।চুড়ারগাতী মৌজার ১৭২ নম্বর খতিয়ানের, ৭৫৪, ৭৫৮, ৭৬৯, ৭৭১, ৭৭২ এই পাঁচ দাগে মোট জমির পরিমান ৩১একর ১০ শতাংশ জমি।

আরো জানা গেছে, উক্ত জমির মধ্যে ৪৬ শতাংশ জমি নিয়ে চলে সোনাউল্লাহ ফকির এবং ইউসুফ মোল্লার সাথে মামলা। দীর্ঘদিন মামলা চলার পরে,civil revision no 5881 of 1991 Dhaka civil revision no 10 of 1985 Jessore  এর মাধ্যমে সোনাউল্লাহ ফকির এর পক্ষে রায় দেন বিজ্ঞ আদালত। এবং ডিগ্রি জারি হয়। উল্লেখ্য ৩১একর ১০ শতাংশ জমির মধ্যে মাএ ৪৬ শতাংশ জমি নিয়ে মামলা চললেও ভূমি দস্যুরা জল জালিয়াতি ভাবে ভুক্তভোগীদের একত্রিশ একর জমি দখল করে নিয়েছেন সাম্প্রতিক । আদালতের ১৪৪-১৪৫ জারি অমান্য করে জোরপূর্বক জমির গাছ ও ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। গণমাধ্যমের কাছে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ভূমি আইন বাস্তবায়ন করলেও  মিলছে না কোন সমাধান মাগুরা জেলায়, অভিযোগের পর অভিযোগ দিয়েই যাচ্ছি কোন গুরুত্ব দিচ্ছেন না প্রশাসন।

এ নিয়ে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে ভুক্তভোগী সোনাউল্লাহ ফকিরের ছোট ছেলে ‍‍`এনায়েত হোসেন‍‍` গত ২৬-১০-২৩ আদালতে এব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করেন,মামলা নং ৫১১" উক্ত মামলার প্রেক্ষিতে আদালত বিরোধ পুর্ণ ওই ভুমিতে ১৪৪-১৪৫ ধারা জারি করেন। কিন্তু সোমবার সকালে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই সাবেক ইউপি ওয়াজেদ ও শওগত ওসমান নেতৃত্বে ৩০/৪০ জন লোক দেশীয় অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে উক্ত জমির পাকা ধান,ও গাছ কেটে নিয়ে আসেন। বাকি অংশের ধান মাঠে পঁচে নষ্ট হচ্ছে।

প্রকৃত জমির মালিক ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক এনায়েত হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি একজন নিরীহ কৃষক। শওকত এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি তার লোকজন নিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা আমান্য করে জোর করে আমার জমির ধান ও গাছ কেটে নিয়ে গেছে। আমি  এর উপযুক্ত বিচার চাই, বলে তিনি কাঁদতে থাকেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি বোরহান অফিসার ইনচার্জ মহাম্মদপুর থানা তিনি বলেন,আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ১৪৪- ১৪৫ জারি বহাল রয়েছে। আর উক্ত বিষয়ে আমার থানায় কোন অভিযোগ আসে নাই আমি গত তিন মাসে আগে যোগদান করেছি। এব্যাপারে মহাম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ মন্ডল ২ নভেম্বর দুপুরে বলেন,আদালতের ১৪৪-১৪৫ ধরা অমান্য করে কৃষকের ধান কাটতে পারেন না কেউ। অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার বিষয়ে পুলিশের রিপোর্ট পাওয়ার পরই পরবর্তী আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( রাজস্ব) ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (অতিরিক্ত দায়িত্ব) তিনি বলেন,"মহাম্মদপুর পি -৫১১/২৩,ফৌঃ,কাঃ বিঃ ১৪৪/১৪৫ ধারা মাগুরা বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের একটি নিয়মিত মামলা। ভুক্তভোগীরা যদি আইনজীবীর মাধ্যমে ডকুমেন্ট সাবমিট করেন তবে আই্নিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এখানে ১৪৪-১৪৫ অমান্য করে ফসল কাটা এবং গাছ কাটার সুযোগ নেই"। জমি দখল ফৌজদারি অপরাধ এবং এতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দেয়, তাহলে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৪৫ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ রয়েছে ভুক্তভোগীদের।

এ ধারা অনুযায়ী ভুক্তভোগী কৃষক এনায়েত (৭০) তিনি প্রতিকার চেয়েছেন  প্রথম শ্রেণির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। মামলা কালে ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় পক্ষের উপর সমন জারি করেন। এরপর ২৬-১০-২৩ আদালত ওসি মহাম্মদপুর কে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার এবং দ্বিতীয় পক্ষকে কারণ দর্শানোর জন্য আদেশ করেন। তবে এ ব্যাপারে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি, যার ফলে ১৪৪-১৪৫ জারী অবস্থায় ভুক্তভোগীর জমির ধান ও গাছ কেটে বিক্রি করেছে ভূমি দস্যু দুর্বৃত্তরা।

গণ-উপদ্রব গুরুতর আকার ধারণসহ মারামারি বা দাঙ্গা বেঁধে যাওয়ার উপক্রম হলে ভুক্তভোগীর অভিযোগের জেরে,বিজ্ঞা ম্যাজিস্ট্রেট ১৪৪ ধারা জারি করেন। ভুক্তভোগীর অভিযোগ পত্র থেকে দেখা যায়, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারার মামলা স্থাবর সম্পত্তিসংক্রান্ত ব্যাপারে বিরোধের ফলে উদ্ভুত শান্তি ভঙ্গের সম্ভাবনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়েছে।  স্থাবর সম্পত্তি দখল এবং বেদখলের কারণে ১৪৫ ধারার মামলা দায়ের করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। দখল ও বেদখলকে কেন্দ্র করে শান্তি শৃঙ্খলার অবনতি এমনকি রক্তারক্তি,খুন,জখমের সম্ভাবনা থাকায় ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৪৫ ধারার মামলা দায়ের করা হয়েছে।

উক্ত বিষয়ে আদালতের স্হিতাবস্হা বজায় রাখার আদেশ পেলেও ভূমি দস্যু জমির ধান ও গাছ কেটেছে। ১৮৮ ধারা অনুসারে দন্ডনীয় এবং আবেদনকৃত আদেশটি স্থায়ী হবে। এই ধারা মতে আদেশ আমান্য ব্যাক্তির সবর্চ্য ছয় মাস পযন্ত কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা অর্থদন্ড হতে পারে। তিনি আইন জেনেও ১৪৪-১৪৫ জারির পরও জমির ধান ও গাছ কেটেছে। জমিজমার দখলদারিত্ব,সীমানা নির্ণয়করণ নিয়ে এ অঞ্চলে রক্তারক্তি ও প্রাণহানির ঘটনা কারো কাছে অপরিচিত নয়,উক্ত জমি নিয়েও ঘটেছে এর আগে কয়েকটি হত্যাকান্ড। উক্ত স্থাবর সম্পত্তি নিয়ে এই রক্তক্ষয়ী কোন্দল-কলহ ও দাঙ্গার বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ হিসেবে ভুক্তভোগীরা আদালতের ধারস্থ হয়েছেন।

বাংলাদেশে প্রচলিত ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারার মাধ্যমে জনসাধারণের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।  সম্পত্তির এই বিরোধ নিয়ে মহাম্মদপুর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন গত ১৩-৪-২৩, ভুক্তভোগী রিয়াদ হোসেনের অভিযোগ,স্থাবর সম্পত্তি নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে বিরোধের জেরে শান্তি ভঙ্গের আশঙ্কা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ওলিয়ার সি এ টু ডিসি দপ্তর সহ মহাম্মদপুর থানাতেও অভিযোগ দিয়েছি কিন্তু কোন প্রতিকার বা সুরাহা পাইনি আজও।  আমাদের জমির ধানঁ ও গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা কোন ১৪৪- ১৪৫ ধারা মানছেন না।

আরএস