রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরীতে ব্যস্ত দৌলতপুরের গাছিরা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২৩, ০৬:২২ পিএম

শীতকাল এলই প্রকৃতি তার হরেক রকম বৈশিষ্ট্য ফুটে তোলে। কৃষকের গোলায় নতুন ধান, নানান রকমের পিঠা তৈরি, শাক-সবজিসহ অনেক কিছুই দেখা যায় শীতকালে। এর মধ্যে অন্যতম আরেকটি অনুষঙ্গ হচ্ছে খেজুর গাছ থেকে ‘রস’ সংগ্রহ গুড় তৈরী।

শীতে সবসময়ই খেজুর রসের বাড়তি চাহিদা থাকে। চাহিদা থাকে শীতের মিষ্টি জাতীয় সুস্বাদু খাবার তৈরীতে খেজুরের গুড়েরও। নানা রকমের বাহারি পিঠাপুলির জন্য খেজুরগুড় বা খেজুর রসের জুড়ি মেলা ভার। আর এর চাহিদা মিটাতে শীতের শুরুতেই খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরীতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার গাছিরা।

গ্রামীণ মেটো পথ বা সবুজে ঘেরা মাঠে সারিবদ্ধভাবে একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা খেজুর গাছগুলো এখন গাছিদের দখলে। বিকেল হলেই তারা মাটির কলসি নিয়ে গাছের মাথায় উঠেন রস আহরণে। আর ভোরের কুয়াশা ভেদ করে সূর্য উঠার আগেই তা নামিয়ে জ্বাল দিয়ে় তৈরী করেন খেজুরগুড়।

আবার অনেকে গাছিদের কাছ থেকে টাটকা রস সংগ্রহ করে তা তৃপ্তিসহকারে পান করে থাকেন। রাজশাহীর বাঘা ও নাটোর জেলার লালপুর থেকে গাছিরা এসেছেন দৌলতপুর সহ কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় খেজুর রস ও গুড় সংগ্রহ করতে।

শীত মৌসুমের ৪ মাসের আয় দিয়ে বছরের অন্যান্য সময়ে আর্থিক চাহিদা মিটিয়ে থাকেন তারা। খরচ বাদ দিয়ে এক একগাছির শীত মৌসুমে ১লক্ষ থেকে ১লক্ষ ২৫ হাজার টাকা আয় হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন তারা।

দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের দফাদারপাড়া গ্রাম যা অনেকে খেজুর পল্লী হিসেবে জানেন। আর এ খেজুরপল্লীর ভেজালমুক্ত খেজুরের রস বা গুড়ের চাহিদা বেশী থাকায় সকাল ও সন্ধ্যায় বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা তা সংগ্রহ করতে ছুটে আসেন এই পল্লীতে।

ভেজালমুক্ত প্রতি কেজি গুড় ১৮০ টাকা থেকে ২০০টাকায় ক্রয় করতে পেরে খুশি ক্রেতারা। খুশি সুস্বাদু টাটকা রস সংগ্রহ করতে পেরেও এমনটি জানিয়েছেন রানা হোসেন নামে স্থানীয় এক ক্রেতা। মো. রতন আলী খেজুরগুড় সংগ্রহ করে অনলাইনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রয় করে থাকেন তিনি। তার মত অনেকে অনলাইনে খেজুরগুড় সংগ্রহ ও বিক্রয় করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন ।

দৌলতপুর কুষি অধিদপ্তর এর তথ্য মতে কুষ্টিয়া জেলায় ১২২ হেক্টর খেজুরের আবাদ হলেও সীমান্তবর্তী দৌলতপুর উপজেলায় ৪০ হেক্টর আবাদে রয়েছে ২০হাজার খেজুর গাছ। যা থেকে এক মৌসুমে ২৬০ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদন হয়ে থাকে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশ বিদেশে বিক্রয় হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন দৌলতপুর কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম।

শীতের খেজুর রস ও গুড় ভোজন পিয়াসীদের যেমন চাহিদা মিটিয়ে থাকে তেমনি প্রকৃতির ভারসাম্য ও দূর্যোগ মোকাবেলায়ও খেজুর গাছ প্রাণীকুলকে রক্ষা করে থাকে।

এইচআর