ফরিদপুরে দখল-দূষণে মৃতপ্রায় কুমার নদ

ফরিদপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৪, ০৫:১৫ পিএম

ফরিদপুরে দুই পাড়ে দুটি বড় বাজারের যাবতীয় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে কুমার নদে। শহরের বুকে বয়ে চলা পৌরসভার ড্রেনগুলোর নিষ্কাশন মুখ এই নদীতে মিশেছে। ফলে যাবতীয় মারাত্মক দূষিত পানীয় বর্জ্য এসে পড়ছে নদীতে। আর রাঘববোয়ালেরা এখনো নদীর দুইপাড়ের জমি দখল করে অনেকে পাকা বাড়িঘর, দোকানপাট গড়ে তুলেছে।

এক বছর আগে কুমার নদ রক্ষা অভিযান শুরুর পরেও এখনো চলছে এই দখল-দূষণ। কিন্তু শহর ফরিদপুরকে বাঁচাতে হলে কুমার নদকে বাঁচাতেই হবে।

‘বিশ্ব পানি দিবস’ উপলক্ষে ফরিদপুরে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ তথ্য জানান ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার।

রোববার জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় টেকসই উন্নয়নকে নিশ্চিত করতে পানি ব্যবহারের ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এর আগে দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে একটি র‍্যালি বের করা হয়।

আলোচনা সভায় ফরিদপুরের পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, মধুমতি ও কুমার নদের নাব্যতা রক্ষাসহ অবৈধভাবে বালি উত্তোলনসহ শহরের উপকণ্ঠে সিএন্ডবি ঘাটের পাশে ধলার মোড় সংলগ্ন পদ্মা নদীর সাথে কুমার নদের উৎসমুখে ভরাট ও নির্মাণের পরে এক বছর ধরে পড়ে থাকা ১৭৬ কোটি টাকা প্রকল্পব্যয়ে নির্মিত মদনখালী সুইস গেটটি অকার্যকর হয়ে পড়ে থাকার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে।

ফরিদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মনিরুল হক মনির বলেন, কুমার নদে বর্জ্য না ফেলার জন্য ব্যবসায়ীদের বারবার সতর্ক করা হলেও কাজ হয়নি। রাতে পরিষ্কার করে দেই সকালে আবার ময়লা ভরে উঠে। আর বিকল্প না থাকায় ড্রেনের মুখগুলো নদী থেকে অন্যস্থানে সরানো যায়নি। বর্জ্য সমস্যা নিরসনে নদীর পাড়েই ডাস্টবিন স্থাপন করে বর্জ্য অপসারণ করতে বলা হয়।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা স্বাগত বক্তব্যে বলেন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ভূউপরিভাগস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। কারণ সুপেয় পানি প্রাপ্তির উপরে নির্ভর করছে আমাদের পরিবেশ-প্রতিবেশের নিশ্চয়তা। অন্যথায় আমরা সংকটে ভুগবো।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়াছীন কবির বলেন, ফরিদপুরে শহরের মধ্যে দিয়ে নদী ও খাল প্রবাহিত হয়েছে এটি একটি সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষা করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের কোন মাস্টার প্ল্যান ছিলোনা। তবে এখন ডেল্টা প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। শহরকেন্দ্রিক এই খাল ও নদীকে বিস্তীর্ণ প্ল্যানের আওতায় এনে কাজ করতে হবে।

জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, পদ্মা ও মধুমতি থেকে অবৈধভাবে প্রচুর বালু তোলা হয়। যদি তুলতেই হয় তাহলে বালুমহাল ঘোষণা করে ইজারা দিয়ে তোলা হোক। আর শহরের প্রাণ কুমার নদ রক্ষায় রোজার ঈদের পরে মাস্টার প্ল্যান ধরে অবৈধস্থাপনা উচ্ছেদে জোরদার অভিযান শুরু করা হবে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে অবগত করে অভিযান চালানো হবে যাতে কেউ এনিয়ে অপপ্রচার চালাতে না পারে। প্রভাবশালী হোক বা যেই হোক কারো ওজরআপত্তি গ্রাহ্য করা হবেনা। রোজার পরে কুমার নদের দুই পাড়ে নদীর জায়গায় যত স্থাপনা রয়েছে সব ভেঙে দেয়া হবে।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রামানন্দ পাল, মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামনুন রশীদ অনিক, সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোরাদ হোসেন প্রমুখ।

ইএইচ