যমুনা তীরবর্তী চরাঞ্চলের মাঠজুড়ে এখন শুধু সোনালি ভুট্টার ছড়াছড়ি। ফসল ঘরে তোলার ব্যস্ততা আর ফলনের হাসিতে টাঙ্গাইলের কৃষকদের মুখে ফুটে উঠেছে পরিশ্রমের সার্থকতা। চলতি মৌসুমে ভূঞাপুর উপজেলায় ভুট্টা চাষে যে সাফল্য মিলেছে, তা নিয়ে উচ্ছ্বসিত কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ভূঞাপুরে ৩ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ১৪ মেট্রিক টন। মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষক পরিবারগুলো দলবদ্ধভাবে ভুট্টা সংগ্রহ, মাড়াই, শুকানো ও সংরক্ষণের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ গাছ কাটছেন, কেউ গাছ থেকে ভুট্টা ছাড়াচ্ছেন, আবার কেউবা রোদে বিছিয়ে দিচ্ছেন শুকানোর জন্য। নারী-পুরুষ, এমনকি শিশুরাও বাদ যাচ্ছে না এই কাজে।
কৃষকরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবারে ফলন ভালো হয়েছে। বিঘাপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ মণ ভুট্টা উঠেছে জমি থেকে, যা গত বছরের চেয়ে ৪ থেকে ৫ মণ বেশি। প্রতি বিঘায় চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা, কিন্তু বাজারে প্রতি মন ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে ১,১০০ থেকে ১,২০০ টাকায়। এতে করে বিঘাপ্রতি লাভ হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এমন লাভে কৃষকেরা বলছেন, ‘ভুট্টা চাষে এবার সোনার ফসল পেয়েছি।’
ভুট্টার মৌসুমে শ্রমিকেরও কাজের অভাব নেই। পুরুষ শ্রমিকরা দৈনিক ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং নারী শ্রমিকরা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা মজুরি পাচ্ছেন।
ভূঞাপুরের চরাঞ্চল গাবসারা, গোবিন্দাসী, নিকরাইল ও অজুনা ইউনিয়নের মাঠজুড়ে চলছে এই চাষাবাদ। সেখানকার কৃষকরা জানান, মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। পাশাপাশি কৃষি অফিস থেকে প্রাপ্ত বীজ ও সার সহায়তা এবং মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ তাদের কাজে এসেছে।
ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘চরাঞ্চলের মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। আমরা কৃষকদের বিভিন্ন প্রণোদনা ও কারিগরি সহায়তা দিয়েছি। এতে করে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’
ভুট্টা এখন শুধু খাদ্যশস্য নয়, পোলট্রি ও ফিড শিল্পের কাঁচামাল হিসেবেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে বাজারে চাহিদা ও দাম—দুটোই কৃষকের পক্ষে। আর সে কারণেই ভুট্টা চাষে সাফল্য কৃষকদের দিয়েছে নতুন আশার আলো।
বিআরইউ