“অ্যারার ফোয়া ইউনুস ফইলল্যা আইঁয়্যের… সরকার প্রধান! শান্তির নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন আমাদের ইউনূস। সারা দুনিয়া উনারে চিনে, সম্মান করে।”—আবেগাপ্লুত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকার এক সবজি বিক্রেতা সৈয়দ আলম শাহলম (৬৪)। চোখের কোণে অশ্রু, তবে তা আনন্দ ও গর্বের।
দীর্ঘ দেড় দশক পর নিজ জন্মস্থান চট্টগ্রামে আসছেন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর আগমনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। বুধবার তাঁর আগমন উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
নিজ গ্রামে ঈদের আমেজ
সরকার প্রধান হিসেবে এই প্রথম নিজ গ্রাম হাটহাজারীর শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে আসছেন অধ্যাপক ইউনূস।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.বি.এম. মশিউজ্জামান বলেন, “স্যার গ্রামে আসতে পারেন, এজন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। গ্রামের মানুষ তাঁর জন্য উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছে।”
তিনি জানান, অধ্যাপক ইউনূস তাঁর গ্রামের নিকটাত্মীয়দের কবর জিয়ারত করতে পারেন। স্থানীয়রা তাঁকে সম্মান জানাতে নানা প্রস্তুতি নিয়েছেন।
চট্টগ্রাম বন্দর ও কালুরঘাট সেতু উদ্বোধন
চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-৫ প্রাঙ্গণে তিনি বন্দর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র ওমর ফারুক জানান, “স্যার প্রায় ৪৫ মিনিট চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থান করবেন এবং দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন।”
পরে তিনি কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মাণাধীন কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করবেন—যা দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি-লিট সম্মাননা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ইউনূসকে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। তিনি ১৯৭২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন এবং বিভাগীয় প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তনে ২২ হাজার ৫৮৬ জন শিক্ষার্থীকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হবে। এর মধ্যে ৪২ জন পিএইচডি এবং ৩৩ জন এম.ফিল ডিগ্রিপ্রাপ্ত। সমাবর্তনের দিন ব্যক্তিগত যানবাহনের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে বাস ও ট্রেন সার্ভিস চালু থাকবে।
নিরাপত্তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ জেলা পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা, এসএসএফ ও অন্যান্য বাহিনী অধ্যাপক ইউনূসের নিরাপত্তায় কাজ করছে। শহরের প্রবেশদ্বারে বসানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ জানান, “এসএসএফ ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে। সব গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কনভোকেশন কার্ড ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। বিশেষ নির্দেশনার ভিত্তিতে ফোন কলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জানানো হচ্ছে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়।
ইএইচ