ভোলাগঞ্জে প্রতিদিন লুট হচ্ছে কোটি টাকার পাথর-বালু

সিলেট ব্যুরো প্রকাশিত: মে ১৯, ২০২৫, ০১:৩৫ পিএম

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য এক সময় ব্রিটিশদের মুখে পরিচিত 'ইডেন গার্ডেন অফ প্যারাডাইস' নামে খ্যাত সিলেটের ভোলাগঞ্জ এখন পরিণত হয়েছে লুটের রাজ্যে। 

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি ও শাহ আরেফিন টিলা এলাকা থেকে প্রতিদিনই লুট হচ্ছে কোটি টাকার পাথর ও বালু। সংরক্ষিত বাংকার এলাকাও রেহাই পাচ্ছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কাজে লাগিয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র নির্বিচারে এসব সম্পদ আত্মসাৎ করছে।

ইতিহাস অনুযায়ী, ব্রিটিশরা এই এলাকাকে একসময় ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্রাউন ল্যান্ড’ ঘোষণা করে। ১৭০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তারা পরিবারসহ এখানে অবসর সময় কাটাতে আসতেন। বর্তমানে ভোলাগঞ্জ দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্পট 'সাদা পাথর' নামে পরিচিত।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ আগস্টের পর থেকে ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি ও শাহ আরেফিন টিলা এলাকায় পাথর ও বালুর উত্তোলন বেড়েছে বহুগুণে। কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় সংরক্ষিত বাংকার এলাকা থেকেও নির্বিচারে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও তা ক্ষণস্থায়ী। অভিযান শেষ হলেই আবার শুরু হয় লুট। এতে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের একমাত্র রোপওয়ে বাংকার স্থাপনা।

এই লুটপাটের সঙ্গে মাঝে মধ্যে বিএনপির কিছু নেতাকর্মীর নাম আসলেও, স্থানীয়দের অভিযোগ, মূলত প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই স্থানীয় বারকি শ্রমিকরা এবং একটি সংঘবদ্ধ মহল এই সুযোগ নিচ্ছে। তারা বলেন, প্রশাসন চাইলে একটি পাথরও পাচার হতে দিত না—তাই এর পেছনে সদিচ্ছার অভাবই প্রধান অন্তরায়।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার বলেন, “লুট ঠেকাতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অবৈধ যন্ত্রপাতি জব্দ, বারকি নৌকা ধ্বংস এবং জরিমানা ও কারাদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে। তারপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। তবে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।”

এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. ফেরদৌস আনোয়ার জানান, অনিয়ন্ত্রিত পাথর ও বালু উত্তোলনে পরিবেশের ওপর ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে। ভোলাগঞ্জ ‘ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া’ (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা না হওয়ায় সেখানে আইনি পদক্ষেপ সীমিত। জাফলংয়ের মতো ইসিএ এলাকায় যেমন পরিবেশ আইনে মামলা করা যায়, ভোলাগঞ্জে তা সম্ভব নয়। তবে ভোলাগঞ্জকে ইসিএ ঘোষণার বিষয়টি পর্যালোচনার আওতায় আনা যেতে পারে।

ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির সঙ্গে জীবিকা জড়িত কয়েক লাখ শ্রমিক। স্থানীয়দের মতে, প্রশাসনের কঠোর তদারকির মাধ্যমে কোয়ারির কার্যক্রম চালু রাখা ও সংরক্ষিত এলাকায় নজরদারি জোরদার করাই হতে পারে সমস্যার কার্যকর সমাধান।

ইএইচ