ভিক্ষা নয়, জিলাপি বিক্রি করে সংসার চালান হানিফ

আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো প্রকাশিত: মে ২৫, ২০২৫, ০৫:৩৯ পিএম

ভিক্ষা নয়, পরিশ্রম করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন এক পা হারানো ৫০ বছর বয়সী হানিফ আকন। জীবনযুদ্ধে হার না মানা এই মানুষটির ওপর নির্ভরশীল তার ছয় সদস্যের পরিবার।

হানিফ বর্তমানে বরিশালে ‘মামা জিলাপি’ হিসেবে পরিচিত। একসময় পা হারিয়ে দিশেহারা হানিফ এখন নিজে দোকান দিয়ে জিলাপি বিক্রি করেন। পেছনে রয়েছে ‘ইভেন্ট ৮৪’ নামক সংগঠনের মানবিক সহায়তা।

হানিফ জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী ছিলেন না। ২০১৯ সালে বাড়ির পুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে পায়ের ভেতরে মাছের কাঁটা ঢুকে যায়। সেখানে পচন ধরলে দীর্ঘ এক মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর সংক্রমণ ঠেকাতে চিকিৎসকরা তার একটি পা কেটে ফেলেন।

পা হারানোর পর হানিফ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। সংসারে নেমে আসে অভাব, বন্ধ হয়ে যায় চিকিৎসাও। তবে হানিফ ভিক্ষা না করে পরিশ্রমের মাধ্যমে রোজগার করে পরিবার চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।

একসময় স্থানীয়ভাবে সমাজসেবামূলক কাজে নিয়োজিত বরিশালের সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এবং ‘ইভেন্ট ৮৪’ গ্রুপের এডমিন সাজ্জাদ পারভেজের কাছে গিয়ে নিজের দুরবস্থার কথা বলেন হানিফ। কথা শুনে সাজ্জাদ পারভেজ আবেগাপ্লুত হয়ে তাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।

‘ইভেন্ট ৮৪’ গ্রুপের সহায়তায় হানিফকে একটি দোকান খুলে দেওয়ার পাশাপাশি জিলাপি তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করা হয়। এরপর থেকেই হানিফ নতুন করে জীবন শুরু করেন। প্রতিদিন দোকানে দাঁড়িয়ে জিলাপি বানিয়ে বিক্রি করেন তিনি। তার তৈরি জিলাপি খেতে ভিড় করেন স্থানীয়রা।

সম্প্রতি গণমাধ্যমে হানিফের সংগ্রামী জীবনের খবর প্রকাশিত হলে বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন নিজে ছুটে যান হানিফের দোকানে।

বৃষ্টির মধ্যেও হানিফ নিজে ভ্যানে করে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করতে যান বরিশাল শিশু পরিবার (বালিকা দক্ষিণ) কার্যলয়ে। সেখানে জেলা প্রশাসক নিজ হাতে জিলাপি তৈরি করে হানিফকে উৎসাহ দেন। পরে তিনি নিজেও সেই জিলাপি খেয়ে প্রশংসা করেন এবং শিশু পরিবারের সব শিশুদের জন্য জিলাপির ব্যবস্থা করেন।

এসময় জেলা প্রশাসক হানিফের ঘরের জন্য টিন সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেন।

উল্লেখ্য, এর আগে ‘ইভেন্ট ৮৪’ গ্রুপের পক্ষ থেকে হানিফকে দোকান স্থাপন এবং জিলাপি তৈরির উপকরণ দেওয়া হয়। পাশাপাশি আইসিডিএ’র সহায়তায় দোকানে ব্যাটারি ও লাইটের ব্যবস্থা করা হয়।

ইএইচ