টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় এবারের ঈদুল আযহায় সরকারি হিসেবে চাহিদার তুলনায় ২৫ হাজার ১৬টি কোরবানিযোগ্য পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। তবে কোরবানি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং মব ভায়োলেন্সের আশঙ্কায় কোরবানি কমে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। ফলে পশুর হাটে দাম কিছুটা সহনীয় থাকবে বলে আশা করছেন ক্রেতারা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ২৬ হাজার ২০৩টি খামারে দুই লাখ ৩৬ হাজার ৯৯০টি গবাদিপশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু এক লাখ পাঁচ হাজার ৬৯টি, ছাগল এক লাখ ২২ হাজার ৩০৮টি এবং ভেড়া ৯ হাজার ১১৯টি। জেলায় কোরবানির চাহিদা দুই লাখ ১১ হাজার ৯৭৪টি পশু হওয়ায় উদ্বৃত্ত রয়ে গেছে ২৫ হাজার ১৬টি পশু।
গত বছর জেলায় ২৫ হাজার ৮৯২টি খামারে দুই লাখ চার হাজার ৪০৬টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছিল, যার মধ্যে উদ্বৃত্ত ছিল ১৯ হাজার ৪০৬টি।
এবছর খামারের সংখ্যা বেড়ে ৩১১টি এবং প্রস্তুত পশুর সংখ্যা বেড়েছে ৩২ হাজার ৫৮৪টি।
তবে মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি হিসাবের তুলনায় বাস্তবতা ভিন্ন। অনেক পরিবার রাজনৈতিক অস্থিরতা, আর্থিক অনিশ্চয়তা এবং মব ভায়োলেন্সের আশঙ্কায় কোরবানি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী জানান, কোরবানি দিলে অনেকে তাদের আর্থিকভাবে সচ্ছল ভেবে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকেই তারা এবার কোরবানি থেকে বিরত থাকছেন। কেউ কেউ একাধিক ব্যক্তি মিলে ভাগে কোরবানি দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
এদিকে খামারিরা শেষ সময়ে পশুর যত্ন-পরিচর্যায় ব্যস্ত। অনেকেই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গরু প্রচার শুরু করেছেন এবং আগ্রহী ক্রেতারা আগাম যোগাযোগ করছেন। তবে গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পশুর দাম কিছুটা বেশি হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
খামারিরা জানান, ভারতীয় গরু সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ না করলে দেশীয় গরুর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা যাবে। টাঙ্গাইলে পর্যাপ্ত পশু থাকায় বাইরে থেকে গরু আমদানির প্রয়োজন নেই, বরং এখানকার পশু অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা সম্ভব। তবে যদি সময়মতো বাজারজাত করতে না পারেন, তবে লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. মো. শহীদুল আলম জানান, চাহিদার তুলনায় পশু উদ্বৃত্ত থাকায় দাম সহনীয় থাকবে বলে আশা করা যায়। প্রতিটি হাটে পশু চিকিৎসার জন্য ভেটেরিনারি টিম মোতায়েন থাকবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আদিবুল ইসলাম জানান, কোরবানির হাটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। হাটে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বড় অঙ্কের টাকার লেনদেনের সময় পুলিশ সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ইএইচ