ফরিদপুরের নগরকান্দায় যৌথবাহিনীর অভিযানে চাঁদাবাজি ও হত্যার হুমকির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর গোলাম হায়দারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার দিবাগত রাতে নগরকান্দা উপজেলার কোদালিয়া শহীদনগর ইউনিয়নের নিজ বাড়ি থেকে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।
এ সময় তার আরও তিন সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করা হয়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গ্রেপ্তারকৃতদের ফরিদপুর আদালতে হাজির করা হয়।
কোদালিয়া শহীদনগর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রাজু মোল্লা জানান, ইউনিয়ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন মেজর হায়দার। এতে রাজি না হলে গত ১ জুন তাকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযানের সময় কোদালিয়া গ্রামে মসজিদের মাইক ব্যবহার করে স্থানীয় ফরহাদ হোসেন “মেজরের বাড়িতে ডাকাত পড়েছে” বলে গুজব ছড়ান। এতে আশপাশের এলাকা থেকে শত শত মানুষ ঘটনাস্থলে জড়ো হন। পরে পুলিশ মাইকিং ও সাইরেন বাজিয়ে জানায়, এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুজব—ডাকাতির কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এর আগে ডাংগি ইউনিয়নের ভবুকদিয়া গ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নারী নেত্রীর বোনকে ইভটিজিংয়ের অভিযোগে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে গেলে গোলাম হায়দার তার লোকজন নিয়ে সেনা কমান্ডারের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। ঘটনার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, গত ৫ আগস্টের পর তিনি ‘SS07 ফোর্স’ নামে একটি বাহিনী গড়ে তোলেন। গত মে মাসে এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি) নামক একটি রাজনৈতিক দলের ব্যানারে দলীয় কার্যালয় উদ্বোধন করেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। নিজস্ব বাহিনীর মোটরসাইকেল বহর নিয়ে এলাকায় দাপিয়ে বেড়াতেন তিনি। ফরিদপুরে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভাতেও তিনি উপস্থিত ছিলেন।
তার গ্রেপ্তারের পর এলাকায় স্বস্তি ফিরেছে বলে জানান কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দারা। তারা বলেন, দীর্ঘদিন তার প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতেন না। এখন একের পর এক অভিযোগ প্রকাশ্যে আসছে। অনেকেই আশা করছেন, প্রশাসনের এই পদক্ষেপে দুষ্টচক্র ভেঙে পড়বে এবং সাধারণ মানুষ নিরাপদে বসবাস করতে পারবে।
জেলার এনসিপি সংগঠক মো. বায়েজিদ হোসেন সাহেদ বলেন, “গোলাম হায়দার এনসিপির কেউ নন। আমাদের দলে যোগদানের জন্য অনেকেই যোগাযোগ করেন, বিভিন্ন প্রোগ্রামেও অংশ নেন। সে হিসেবে মেজর হায়দার সাহেবও উপস্থিত ছিলেন মাত্র।”
জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সোহেল রানা বলেন, “গোলাম হায়দার আমাদের সংগঠনের কেউ নন। তিনি নিজেদের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেখাতেন। তার গ্রেপ্তার আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক।”
নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসির দায়িত্বপ্রাপ্ত) আমিরুল ইসলাম জানান, “মেজর হায়দারসহ ফরহাদ হোসেনসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও সাধারণ মানুষকে হয়রানির একাধিক অভিযোগ রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, ইউপি সদস্য রাজু মোল্লা বাদী হয়ে থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছেন। মামলার প্রেক্ষিতে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করে এবং মঙ্গলবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়।
ইএইচ