ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলাকে বন্যার হাত থেকে রক্ষার জন্য নির্মিত বাঁধ প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে দফায় দফায় ভেঙে পড়ছে। এতে একদিকে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়, অন্যদিকে হাজার হাজার মানুষ পড়ছে চরম দুর্ভোগে।
গত বছরের বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে উঠার আগেই এবারও মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে নতুন করে বন্যার কবলে পড়েছে এ এলাকার মানুষ।
বৃহস্পতিবার রাতে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ফুলগাজী উপজেলার অন্তত ৬টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।
ফুলগাজী বাজারেও পানি উঠেছে, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দোকানপাট ও ব্যবসায়ীদের মালামাল। এ অবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার বাঁধ ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ড পূর্বাঞ্চল কুমিল্লার প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফ।
ওইদিন সকাল থেকে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ভাঙন মেরামতে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে এবং সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন টিম সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করছে।
জানা গেছে, ২০০৪ সালে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর ওপর ১৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২২ কিলোমিটার মাটির বাঁধ নির্মাণ শুরু হয়, যা ২০১১ সালে সম্পন্ন হয়। প্রথম কয়েক বছর বাঁধটি কার্যকর থাকলেও ২০১৩ সালে তিনটি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। পরে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে তা মেরামত করা হয়। তবে এরপর থেকে প্রতিবছরই বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে চলেছে। গত পাঁচ বছরে বাঁধের শতাধিক স্থান ভেঙেছে।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবারের বাঁধ ভাঙনে অন্তত ৬টি গ্রামের শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাস্তাঘাট। স্থানীয়দের আশঙ্কা, এবার শুধু একটি স্থান মেরামত করলেই হবে না; পুরো বাঁধই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২৪ সালের আগস্টে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ফেনী জেলায় আনুমানিক ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয় এবং ২৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ জানিয়েছেন, মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীপাড়ে ১২২ কিলোমিটার এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য ৭ হাজার ৩৪০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
ইএইচ