নকলায় নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২৫, ০১:৩৮ পিএম

বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই বাড়ছে নতুন নৌকা তৈরির এবং পুরনো নৌকা মেরামতের চাহিদা। ফলে শেরপুরের নকলা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নৌকা কারিগররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

উপজেলার ১নং গণপদ্দী, ২নং নকলা, ৩নং উরফা, ৫নং বানেশ্বরদী, ৮নং চরঅষ্টধর এবং ৯নং চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের কারিগরদের ঘরে এখন চলছে নৌকা নির্মাণের কর্মযজ্ঞ।

স্থানীয়রা জানান, ইঞ্জিনচালিত নৌকা, ডিঙ্গি নৌকা ও বাইচের (দৌঁড়ের) নৌকার চাহিদা বেশি। অনেক কারিগর বছরের বেশিরভাগ সময় অবসর কাটালেও বর্ষার আগমনে তাদের কাজে ব্যস্ততা বেড়ে যায়।

নৌকা নির্মাণশিল্পের কারিগররা জানান, নিচু এলাকার মানুষ নতুন নৌকা তৈরির পাশাপাশি পুরাতন নৌকা মেরামতের জন্য তাদের দ্বারস্থ হন। এ সময়ে নৌকার কাজের প্রকৃত মৌসুম চললেও কাঠ, বাঁশ ও অন্যান্য উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির কারণে খরচ অনেক বেড়ে গেছে।

গণপদ্দী ইউনিয়নের বিহাড়িরপাড় এলাকার কাঠমিস্ত্রি আয়নাল হক বলেন, “সারা বছর কাঠের নানা কাজ করি। বর্ষার সময় কিছু নৌকার কাজ আসে, এতে বাড়তি আয় হয়। তবে আগের তুলনায় নৌকার চাহিদা কমে গেছে।”

উরফা ইউনিয়নের বেনিরগোপ এলাকার বাসিন্দা আমানুল্লাহ আসিফ জানান, “আগে শখ করে মাছ ধরার জন্য কয়েকটি নৌকা থাকত। এখন নদীতে আগের মতো পানি আসে না, মাছও নেই। তাই নৌকা ব্যবহারের প্রয়োজন কমে গেছে।”

বানেশ্বরদী ইউনিয়নের ভূরদী এলাকার মাছ শিকারি মনসুর আলী বলেন, “একসময় আমাদের চায়রা বিল পদ্ম ও সিংড়া মাছের জন্য বিখ্যাত ছিল। এখন বিলে পানি নেই, মৎস্য খামার গড়ে উঠেছে। দেশীয় মাছ ও নৌকা ব্যবহার—দুটোই হারিয়ে যাচ্ছে।”

চরঅষ্টধর ইউনিয়নের নারায়নখোলা এলাকার কাঠমিস্ত্রি আলমাছ আলী বলেন, “নৌকা তৈরিতে কড়ই, হিজল, মেহগনি কাঠ ও বাঁশ ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি আলকাতরা, তারকাটা, গজলসহ অন্যান্য উপকরণ প্রয়োজন হয়। কাঠের মান ও আকারভেদে একেকটি নৌকা তৈরিতে এবার ৭ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “সরঞ্জামের দাম বেড়েছে, খরচও বেড়েছে। তবুও যাদের প্রয়োজন, তারা থেমে নেই—নৌকা বানাচ্ছেন, মেরামত করছেন। কারণ বর্ষায় নৌকাই তাদের চলাচলের একমাত্র ভরসা।”

ইএইচ