ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চান শহীদ আবু সাঈদের বাবা

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০২৫, ০৩:০০ পিএম

ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) এনসিপির নেতাদের সঙ্গে ছেলের কবর জিয়ারত করে এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার চান তিনি।

আবু সাঈদের বাবা বলেন, আমার ছেলেকে প্রকাশ্যে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। যা দেশ-বিদেশের মানুষ দেখেছে। আমি এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। সরকার চাইলে অবশ্যই আমি সুষ্ঠু বিচার পাবো বলে আশা রাখি।

এ দিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় খুশি তার পরিবার। খবর শুনে পীরগঞ্জে আবু সাঈদের বাবা-মাসহ স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এর আগে, সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকালে বাবা মকবুল হোসেন বাড়ির সামনেই ছেলের কবরের পাশে গিয়ে নীরবে কাঁদছিলেন। বয়সের ভারে মকবুল হোসেন যেন শব্দ করে কাঁদতেও পারেন না। ছেলেকে হারানোর পর শারীরিক শক্তিও তার ক্ষয়ে গেছে। গ্রামের মানুষজনও গ্রেপ্তারি পরোয়ানার খবর শুনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। 

২০২৪ সালের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। ওই সময় রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যোগ দেন। তারা প্রতিবাদ সভা ও মিছিল করেন। ১৬ জুলাই বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদ বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ান। পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে আবু সাঈদ শহীদ হন। এরপর আন্দোলনের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। শুরু হয় ছাত্র-জনতার ব্যানারে সরকার পতনের একদফার আন্দোলন।

৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। হত্যা মামলা করেন আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী। মামলার চার্জশিট দাখিলের পর সোমবার ২৬ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, প্রায় এক বছর হলো আমার আদরের ছোট ছেলেকে আমার কবরের জায়গায় কবর দিয়েছি। এই এক বছরে তার কবর জিয়ারতে যত মানুষ এসেছে, তাতে আমার মন ভরেনি। তবে এতটুকু সান্ত্বনা, দেশের মানুষ জালিম সরকারের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে। আবু সাঈদ হত্যা মামলার পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করায় আমি বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এ সময় আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম পাশে দাঁড়িয়ে ছেলের কথা ভেবে চোখের পানি ফেলছিলেন।

আবু সাঈদ হত্যা মামলার বাদী তার বড় ভাই রমজান আলী বলেন, আমি ২৫ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে মামলাটি করেছিলাম। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি উচ্চপদস্থ কমিটি নিয়ে পীরগঞ্জে এসে তদন্তের পর আরও পাঁচজনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করলে ৩০ জন আসামি হয়। সব পলাতক আসামির বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করায় আমরা সন্তুষ্ট। তবে আমরা আশা করেছিলাম আরও ছয় মাস আগে মামলার এই সিদ্ধান্ত আসবে। আমি চাই যারা আমার ছোট ভাইকে হত্যায় জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। আর যারা নিরপরাধ তারা যেন মামলা থেকে অব্যাহতি পায়।

বিআরইউ