বৃষ্টির দিনে এনসিপির পদযাত্রা মাগুরায়: দেখা হয়নি অপেক্ষমাণ পরিবারগুলোর সঙ্গে

মিরাজ আহমেদ, মাগুরা প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২৫, ০৬:১১ পিএম

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বৃহস্পতিবার মাগুরায় বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও একটি বর্ণাঢ্য পদযাত্রা ও পথসভায় অংশ নেন। তবে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আন্দোলনে আহত ও নিহতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। এতে সকাল থেকে অপেক্ষায় থাকা স্বজনদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দেয়।

বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে ঝিনাইদহ থেকে আগত কেন্দ্রীয় নেতারা মাগুরার ইছাখাদা বাজারে পৌঁছালে স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও স্লোগানে বরণ করে নেন। 

পরে সদর উপজেলা পরিষদের সামনের সড়ক থেকে শুরু হওয়া পদযাত্রাটি শহরের ভায়না মোড়, চৌরঙ্গী মোড় ও ঢাকা রোড ঘুরে ফের ভায়না মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

বৃষ্টির মাঝেও ভায়না মোড়ের একটি পরিত্যক্ত পেট্রোল পাম্পের প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় সংক্ষিপ্ত পথসভা। এতে বক্তব্য রাখেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা নাহিদ ইসলাম। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাসনাত আবদুল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজিস আলম, সহ-সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সদস্য আনোয়ার হোসেন। 

আরও ছিলেন জেসমিন নাহার, মাহবুব ইমতিয়াজ, তানভীর হোসেন তুষার, ফারহান হক, সাবিহা সুলতানা, ডা. মেহরাবীন তাসনিম জারা, ডা. ফারজানা রহমান ইরা, ডা. সামিয়া ইসলাম লাবণ্য, জাকিয়া সুলতানা মীরা, নাহিদা আফরোজ, আফরিন রোজা, নাইমা তাসনুভাসহ অনেকে।

পথসভা শেষে নেতারা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও এক শহীদ পরিবারের সঙ্গে দেখা করলেও, জুলাইয়ের আন্দোলনে নিহত ও আহতদের পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা হয়নি।

বরইচারা গ্রামের নিহত মোক্তাকিন বিল্লার মা বলেন, “আমার ছেলে ঢাকায় আন্দোলনে গুলিতে নিহত হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল আজ এখানে আসতে। সকাল থেকে বসে আছি, কিন্তু কেউ এল না।”
নিহত ফরহাদের বোন, যিনি সকাল ৯টা থেকে মাগুরা অডিটোরিয়ামে অবস্থান করছিলেন, বলেন, “এখন বিকেল ৩টা বাজে, শুনলাম তারা চলে গেছেন। খুব কষ্ট লাগছে।”

গুলিবিদ্ধ ইসরাফিল, যিনি মোহাম্মদপুর থেকে এসেছেন, বলেন, “গেজেটে আমার নাম আসেনি, সেটি জানানোর জন্যই এসেছিলাম। কারও সঙ্গে দেখা হলো না। তাহলে কি আমি বাদই থেকে যাব?”

আহত মামুন (বালিদিয়া), মাহাবুর রহমান (উত্তর বীরপুর), রিপন (পারনান্দয়ালি) প্রমুখ একই সুরে বলেন, “অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম, হতাশ হয়ে ফিরছি।”

এ বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব তারেক রেজা মাগুরা অডিটোরিয়ামে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, “আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের মাগুরায় উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে তা সম্ভব হয়নি। নেতারা একাধিক কর্মসূচির জন্য নড়াইলে চলে গেছেন। তবে আহত ও নিহত পরিবারগুলোর সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করে ফের মাগুরায় আসা হবে। আমরা বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথেই দেখছি।”

সফর ঘিরে শহরে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ছিল এবং পুরো কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। বিকেল ৩টার দিকে নেতারা মাগুরা থেকে নড়াইলের উদ্দেশে রওনা দেন, যেখানে বিকল্প রাজনীতির ধারাবাহিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

তবে হতাশ স্বজনদের বক্তব্যই যেন দিনের শেষ কথা-“একটু দেখা হলেও হতো, একটু কথা হলেও হতো।”

ইএইচ