যশোরে বিএসটিআই কার্যালয়ে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ, ভোগান্তিতে সেবা প্রত্যাশীরা

এম এ রহমান, যশোর প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৫, ০৩:৩৬ পিএম

যশোরে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এর চাঁচড়া ডাল মিল কার্যালয় ঘুষ ও দুর্নীতির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক প্রকৌশলী আসলাম শেখের নেতৃত্বে চলছে কোটি টাকা মূল্যের ঘুষ বাণিজ্য। এতে একদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, অন্যদিকে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ সেবা প্রত্যাশী ও ব্যবসায়ীরা।

বিএসটিআই সূত্র জানায়, যশোর অফিসে যোগদানের পর থেকেই আসলাম শেখ ঘুষ গ্রহণকে নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করেছেন। প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা ঘুষ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে, যা মাস শেষে দাঁড়ায় প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকায়। কখনো কখনো এই অঙ্ক ১ কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যায় বলে জানা গেছে।

বর্তমানে সরকার নির্ধারিত ৩১৫টি পণ্যের রাসায়নিক ও গুণগত মান পরীক্ষার দায়িত্ব রয়েছে বিএসটিআই-এর ওপর। এসব পরীক্ষার ছাড়পত্র পেতে ব্যবসায়ীদের গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের ঘুষ। সংশ্লিষ্টরা জানান, ঘুষ ছাড়া কোনো রিপোর্টই হাতে পাওয়া যায় না। কেউ ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের পরীক্ষার ফল ঝুলিয়ে রাখা হয় কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে নেগেটিভ রিপোর্ট প্রদান করা হয়।

বিশেষ করে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকৃত খাদ্যপণ্য ও কেমিক্যাল জাতীয় দ্রব্য যশোর বিএসটিআই অফিসে পরীক্ষার জন্য আসে। অভিযোগ রয়েছে, এসব পণ্যের পরীক্ষার জন্য পণ্যপ্রতি ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দাবি করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, “ঘুষ না দিলে ছাড়পত্র পাওয়া যায় না। আর টাকা দিলেই গুণগত মান যাচাই ছাড়াই অনায়াসে অনুকূলে রিপোর্ট দেওয়া হয়।”

এতে করে পণ্যের প্রকৃত গুণগত মান আড়াল থেকে যায় এবং ভুয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে কাস্টমস মূল্যায়নে এইচএস কোডের ভিন্নতা দেখা দেয়। ফলে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।

যশোর বিএসটিআই দপ্তরের এক সহকারী কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “উপপরিচালক আসলাম শেখের দুর্নীতির বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত। তবে অজানা কারণে কেউ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাহস পান না।”

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে চাঁচড়া ডাল মিল কার্যালয়ে উপপরিচালক আসলাম শেখের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, সাংবাদিক পরিচয় জানার পর তিনি বলেন, “আমি জরুরি কাজে ব্যস্ত, এখন কথা বলা সম্ভব না,” এই বলে দ্রুত রুমের ভেতরে চলে যান।

অন্য কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, “আমরা অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত। উপরমহলের অনুমতি ছাড়া কথা বলা যাবে না।”

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সচেতন মহলে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকেই দ্রুত তদন্ত করে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

ইএইচ