কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে মাগুরা জেলার সদর ও শ্রীপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কৃষিজমি এবং মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে পাট, ধান ও মাছ চাষে ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকার বেশি হয়েছে।
স্থানীয় কৃষক ও উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, একদিকে ফসল ও মাছ হারিয়ে তারা দিশেহারা, অন্যদিকে প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো সহায়তা পাননি।
শ্রীপুর উপজেলার নবাব আলী ৩০ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন।
বলেন, “এখনো পুরো জমি পানির নিচে রয়েছে। যে পাট খালে পচে যাওয়ার জন্য দিয়েছিলাম, সেগুলোও পানির স্রোতে ভেসে গেছে। সব শেষ হয়ে গেছে।”
পাটচাষিরা জানান, প্রতি আটি পাট চাষে খরচ হয় প্রায় ২৫ টাকা, আর প্রতি মন পাট উৎপাদনে খরচ পড়ে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। অথচ বাজারে এক মন পাট বিক্রি হয় মাত্র ৩ হাজার ৮০০ টাকায়। বন্যার কারণে সেই পাটও মাঠে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।
হাজীপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ওয়াসিম জামান বলেন, “পাঁচ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছিলাম, এখন সেই জমিগুলো একেবারে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কোনো ধানই রক্ষা পাচ্ছে না।”
বন্যায় শুধু কৃষক নয়, মাছ চাষিরাও বিপাকে পড়েছেন। তরুণ উদ্যোক্তা পিয়াস খন্দকার বলেন, “আমার ঘেরে প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার মাছ ছিল। হঠাৎ পানি বাড়ায় মাছ সব বাইরে চলে গেছে। শত চেষ্টা করেও ধরে রাখতে পারিনি।”
পানি বৃদ্ধি সঙ্গে প্লাবিত এলাকায় বিষধর সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে, যা জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এছাড়া মাছ ধরার জন্য প্লাবিত মাঠে জাল ফেলায় অবশিষ্ট ফসলও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও উদ্যোক্তারা অভিযোগ করেছেন, বন্যার পর থেকে তারা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সহায়তা চেয়েও সাড়া পাননি।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি অফিসের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইকবাল আহমেদ বলেন, “ফসলের ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব তৈরি করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন পাওয়ার পর জেলা প্রশাসনকে পাঠানো হবে।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিকরা সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ, ত্রাণ বিতরণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত পুনর্বাসনের জোর দাবি জানিয়েছেন।
ইএইচ