সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর কোয়ারি থেকে বিপুল পরিমাণ পাথর লুটের ঘটনায় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি) বাদী হয়ে মামলা করেছে।
গত শুক্রবার (১৬ আগস্ট) কোম্পানীগঞ্জ থানায় দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত দুই হাজার জনকে।
মামলার এজাহার মাত্র ১১ লাইনের মধ্যে পাঁচটি বাক্যে সীমাবদ্ধ। এতে সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনসমূহ।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ১২ আগস্ট পর্যন্ত অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতকারীরা ভোলাগঞ্জ গেজেটভুক্ত পাথর কোয়ারি থেকে কোটি কোটি টাকার পাথর লুট করেছে। বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে, লুটপাটে দেড় থেকে দুই হাজার ব্যক্তি জড়িত।
এ ঘটনায় খনি ও খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন, ১৯৯২-এর ধারা ৪(২)(ঞ), খনি ও খনিজ সম্পদ বিধিমালা, ২০১২-এর বিধি ৯৩(১) এবং দণ্ডবিধি ১৮৬০ সালের ৩৭৯ ও ৪৩১ ধারার লঙ্ঘন হয়েছে।
তবে আইনজীবীরা বলছেন, বিএমডির করা এজাহারটি আইনের দৃষ্টিতে খুব দুর্বল।
সিলেট জেলা বারের আইনজীবী শহিদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, কোন ধারায় মামলা হবে, তা নির্ধারণের দায়িত্ব থানার ওসির, বাদীর নয়। এখানে দণ্ডবিধি ও বিশেষ আইনের ধারা একসঙ্গে প্রয়োগ করা হয়েছে, যা প্রক্রিয়াগতভাবে সঠিক নয়।
সিলেটের পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমানও স্বীকার করেন, এজাহারে কিছু দুর্বলতা রয়েছে।
তিনি বলেন, আসামির নাম-পরিচয় উল্লেখ থাকলে পুলিশের জন্য তদন্ত সহজ হতো। এ অবস্থায় অভিযোগ প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
জানা গেছে, সিলেট জেলায় বিএমডির আওতায় ছয়টি বালুমিশ্রিত পাথর কোয়ারি রয়েছে, মোট দুই হাজার ৬২ একর জমি নিয়ে। ২০১৫ সাল থেকে এসব কোয়ারির ইজারা বন্ধ রয়েছে। যদিও গত জানুয়ারিতে বিএমডির পরিচালক পাঁচটি কোয়ারি ইজারা দেওয়ার প্রস্তাব দেন, কিন্তু পরিবেশবাদী সংগঠনের মামলার কারণে তা স্থগিত থাকে।
২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশের সব কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন স্থগিত করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সেই স্থগিতাদেশ আংশিক প্রত্যাহার করলেও সিলেট অঞ্চলের পরিবেশ ও পর্যটন বিবেচনায় বেশিরভাগ কোয়ারির ইজারা স্থগিত রাখা হয়। এর মধ্যেই ভোলাগঞ্জে পাথর লুট অব্যাহত থাকে।
এদিকে, পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট অফিস থেকে জানা গেছে, খনিজ কোয়ারিতে পরিবেশ নষ্টের অভিযোগে একাধিক মামলা করা হয়েছে। তবে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো কিংবা জেলা প্রশাসন তাদের সঙ্গে সরাসরি সমন্বয় করে না।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান বলেন, ভোলাগঞ্জে পাথর-সংক্রান্ত বিষয়ে গত এক বছরে থানায় ১৯টি মামলা হয়েছে। ট্রাক আটকাতে গিয়ে চারবার পুলিশও হামলার শিকার হয়েছে।
বিএমডির মহাপরিচালক মো. আনোয়ারুল হাবীব এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু জানান, সিলেটের পাথর ইস্যুতে তিনি ব্যস্ত আছেন।
ইএইচ