ডিসিসিআই’র কর্মশালায় সভাপতি রিজওয়ান রাহমান

এলডিসি উত্তোরণে শুল্ক কাঠামোর সংষ্কার জরুরী

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২২, ০৬:৫৬ পিএম

এলডিসি উত্তোরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের রাজস্ব ও শুল্ক কাঠামোর আমূল সংস্কার, নীতিমালা সহজীকরণ, দক্ষতা উন্নয়ন, বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলোর সাথে পিটিএ এবং এফটিএ স্বাক্ষরের পাশাপাশি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংস্থাসমূহে নিজেদের অন্তর্ভূক্তি একান্ত অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। 

বুধবার (২৬ অক্টোবর) ডিসিসিআই আয়োজিত ‘প্রতিযোগিতামূলক শুল্ক কাঠামো: প্রেক্ষিত স্বল্পোন্নত দেশের উত্তরণ’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের যুগ্ম প্রধান মো. মশিউল ইসলাম। এছাড়া নির্ধারিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শীষ হায়দার চৌধুরী (এনডিসি), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (ডব্লিউটিও সেল, পরিচালক-৩) ফারহানা আইরিছ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রথম সচিব (শুল্ক রেয়াত ও প্রকল্প সুবিধা) ড. মো. নিয়োমুল ইসলাম।

উদ্বোধনী বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, এলডিসি উত্তোরণের পর আর্ন্তজাতিক বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা হারাবে এবং দেশে উৎপাদিত পণ্য বহিঃর্বিশ্বে রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রায় ৮%-১৬% শুল্ক প্রদান করতে হবে। যা আমাদের রপ্তানির সক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করবে।

তিনি বলেন, স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষায় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বর্তমানে চলমান নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক কাঠামোতে উল্লেখজনক হারে পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে আমাদের স্থানীয় উদ্যোক্তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পণ্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে ভ্যালু অ্যাডিশন নিশ্চিতের কোন বিকল্প নেই।

সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা, দেশের রাজস্ব ও শুল্ক কাঠামোর আমূল সংষ্কার-অটোমেশন নিশ্চিতকরণ, নীতিমালা সহজীকরণ, দ্রুততম সময়ে ও হয়রানি ছাড়া উদ্যোক্তাদের সরকারি সেবা প্রাপ্তি, শ্রমিক ও উদ্যোক্তাদের দক্ষতা-সক্ষমতা উন্নয়ন, বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলোর সাথে পিটিএ-এফটিএ স্বাক্ষরের পাশাপাশি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংস্থায় নিজেদের অন্তর্ভূক্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ একান্ত অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেন ডিসিসিআই সভাপতি।  

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় মো. মশিউল ইসলাম বলেন, গত অর্থবছর বাংলাদেশ ৫২বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং সর্বোচ্চ রপ্তানিকৃত ২০টি পণ্যের মধ্যে ১৮টিই শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা ভোগ করেছে। 

এলডিসি উত্তোরণের পর আমাদের উদ্যোক্তারা এ সুবিধা প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হবেন। এমতাবস্থায় বৈশ্বিক বাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বেসরকারিখাতকে দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়াতে এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। 

এলক্ষ্যে বাণিজ্য সহযোগী দেশসমূহের সাথে দ্রুততম সময়ে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর (এফটিএ) এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ব্লকগুলোতে বাংলাদেশের অন্তর্ভূক্তি নিশ্চিত করা অপরিহার্য বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

এছাড়া বিশ্ব বিনিয়োগ আকর্ষণ ও দেশীয় শিল্পায়ন বেগবানে সার্বিক রাজস্ব এবং শুল্ক কাঠামোর আমূল সংষ্কার, অটোমেশন ব্যবস্থা নিশ্চি করার উপর জোর দেন মো. মশিউল ইসলাম। 

পাশাপাশি পরিবর্তিত বৈশ্বিক বাণিজ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশে একটি ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি প্রণয়ন জরুরী বলে অভিমত দেন তিনি। একই সাথে দেশের রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে ভ্যালু অ্যাডিশনের উপর আরো বেশি মনোনিবেশ করতে উদ্যোক্তাদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শীষ হায়দার চৌধুরী, এনডিসি বলেন, বাস্তব ভিত্তিক শুল্ক কাঠামো প্রণয়নে দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতকে একযোগে কাজ করতে হবে। 

তিনি উল্লেখ করেন, কোভিড মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দূর্যোগ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থা বাংলাদেশের এলডিসি উত্তোরণের পরিস্থিতিতে জটিল করেছে।

বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলোর সাথে এফটিএ এবং পিটিএ স্বাক্ষরে সরকার বেশ কিছু গবেষণা চালাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের জিডিপিতে করের অবদান মাত্র ৭.৯%, যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এলডিসি উত্তোরণের পর রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সরকারকে আরো অধিক হারে ভ্যাট ও কর আহরণের উপর নজর দিতে হবে বলে।    

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ফারহানা আইরিছ বলেন, শুল্ক কাঠামো সহজীকরণের পাশাপাশি আমাদেরকে রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানো ও পণ্য বহুমুখীকরণের উপর নজর দিতে হবে। কারণ বর্তমানে আমাদের রপ্তানি ও আমদানির মধ্যে বিশাল ঘাটতি রয়েছে। তিনি জানান, ভূটান, নেপাল এবং শ্রীলংকার সাথে এফটিএ স্বাক্ষরের লক্ষ্যে সরকার গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।  

এনবিআরের প্রথম সচিব ড. মো. নিয়োমুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে দেশের মোট রাজস্বের ৩৪% আসে আমদানি শুল্ক হতে এবং এলডিসি’র চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে আমদানি শুল্ক হারে উল্লেখজনক হ্রাস করতে হবে। সেক্ষেত্রে ভ্যাট ও আয়করের উপর বেশি হারে প্রাধান্য দিতে হবে। 

তিনি জানান, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৬টি পণ্যের আমদানি শুল্ক হার কমানো হয়েছে। আরো ৬০টি পণ্যের আমদানি শুল্ক হ্রাসে এনবিআর কাজ করছে। তবে এতে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা যেন ব্যাহত না হয় সে বিষয়েও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। এ সময় এলডিসি’র চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্থানীয় শিল্পের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই বলে মতামত দেন তিনি।  

ডিসিসিআই আয়োজিত কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি আরামন হক। সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ৫০জন প্রতিনিধি উক্ত ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেন।

টিএইচ