জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের পরও রাজস্ব সংস্কার প্রক্রিয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা ও চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। চলমান আন্দোলনে আমদানি-রফতানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। রাজস্ব খাতে এক ধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের অভিযোগ— সরকারের সদিচ্ছার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান একের পর এক বাধাসৃষ্টিকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। ফলে এনবিআরের আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আজ থেকে সারা দেশে লাগাতার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেছেন।
শনিবার (২৮ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানিয়েছে, ২৮ জুন থেকে এনবিআরের সব অফিসে লাগাতার শাটডাউন চলবে এবং ২৯ জুন সারাদেশ থেকে ‘শান্তিপূর্ণ মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি পালিত হবে। আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবার বাইরে সব কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।
সরকারে সিদ্ধান্তের পরও অগ্রগতি হয়নি
ঐক্য পরিষদের দাবি, গত ২২ মে মধ্যরাতে জারি করা রাজস্বনীতি ও ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির প্রেক্ষিতে সরকার ২৫ মে এক বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। সরকার জানায়, এনবিআরকে স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত বিভাগ হিসেবে রক্ষা করা হবে এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন না আনা পর্যন্ত অধ্যাদেশটি কার্যকর করা হবে না। কিন্তু ঐক্য পরিষদের অভিযোগ, এনবিআর চেয়ারম্যান শুরু থেকেই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধা দিয়ে চলেছেন।
চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ
সংগঠনের নেতাদের অভিযোগ, এনবিআর চেয়ারম্যান একের পর এক পদক্ষেপের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী চরিত্রের পরিচয় দিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে— সংস্কারের বিষয়ে সেমিনার আয়োজনের জন্য অফিস কক্ষ বরাদ্দ না দেওয়া, বরং সংশ্লিষ্ট চিঠি ছুড়ে ফেলা। রাজস্ব ভবনের গেট বন্ধ করে কর্মকর্তা, সেবাগ্রহীতা ও সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা। আলোচনাবিহীন একতরফাভাবে রাজস্ব অধ্যাদেশ সংশোধন কমিটি গঠন এবং বিতর্কিত কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্তি। সংস্কারপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুমকি, হয়রানি ও বদলির মাধ্যমে প্রতিহিংসা চরিতার্থের অভিযোগ।
ঐক্য পরিষদ দাবি করছে, ২১ ও ২২ জুনের আদেশে যেসব কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে, তারা পেশাদার ও দক্ষ ছিলেন এবং সংস্কার কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। এসব বদলিকে ‘অবৈধ ও প্রতিহিংসাপরায়ণ’ বলে অভিহিত করেছেন তারা।
ব্যবসায়ীদের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন
সংগঠনটি এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছে— আজ (২৮ জুন) দেশের ব্যবসায়ীসমাজ সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণকে অপ্রয়োজনীয় বলে মন্তব্য করেছে, যা তাদের (ঐক্য পরিষদ) কাছে বিস্ময়কর। তারা জানতে চেয়েছেন, সরকারের নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধাদানকারী একজন আমলাকে কেন ব্যবসায়ীরা সমর্থন করছেন, তা স্পষ্ট করা হয়নি। সংগঠনটি জানিয়েছে, ২৮ জুন থেকে এনবিআরের সব অফিসে লাগাতার শাটডাউন চলবে এবং ২৯ জুন সারাদেশ থেকে ‘শান্তিপূর্ণ মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি পালিত হবে। আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবার বাইরে সব কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এছাড়া তারা জানিয়েছেন— পরিস্থিতি নিরসনে তারা যেকোনও সময় অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে এখনও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সে ধরনের কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে দাবি তাদের।
ঐক্য পরিষদের আহ্বান
সংগঠনের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ও মহাসচিব সেহেলা সিদ্দিকার সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ ছাড়া টেকসই ও বাস্তবধর্মী রাজস্ব সংস্কার সম্ভব নয়। তারা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং দেশবাসী, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী সমাজের সহানুভূতি কামনা করেছেন।
আরএস