কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, এক নিয়মের দু’রকম প্রয়োগ

আহমেদ ইউসুফ, কুবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২২, ০৮:৫১ পিএম

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিয়মানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ইনস্টিটিউশন্যাল কোয়ালিটি এসিউরেন্স সেল (আইকিউএসি) এর দায়িত্ব থাকা ব্যক্তিবর্গরা দায়িত্ব চলমান অবস্থায় অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করতে পরবেন না। 

তবে সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) আইকিউএসি’র পরিচালক ও অতিরিক্ত পরিচালকের ক্ষেত্রে এ নিয়ম বাস্তবায়নে ব্যক্তিভেদে ভিন্নতা দেখা গেছে। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কানাঘুষার সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিষয়টি এমন হয়েছে যে এক দেশে দুই নীতি। একজনের জন্য আইন মানা হচ্ছে আরেকজনের জন্য আইন মানা হচ্ছে না। ইউজিসির নীতিমালা থাতা সত্বেও কেন এটি বাস্তবায়ন হয়নি সেটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভালো বলতে পারবে। 

গত ৬ অক্টোবর ২০২১ সালে প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক অর্গানোগ্রামে বলা হয়, "নিযুক্ত আইকিউএস-এর পরিচালক এবং কোনো অতিরিক্ত পরিচালককে স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ব্যতিত প্রশাসনিক বা জন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না। নিয়োগপ্রাপ্ত আইকিউএসি-এর কোনো পরিচালক বা অতিরিক্ত পরিচালক পূর্ব থেকে এ ধরনের প্রশাসনিক বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্বে থাকলে অনতিবিলম্বে তাঁকে উক্ত অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে অথবা আইকিউএসি-এর সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে হবে।"

উক্ত নির্দেশনার আলোকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকিউএসি'র পরিচালকের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় এ পদে গত ২০ এপ্রিল নতুন পরিচালক হিসেবে ৩ বছরের জন্য নিয়োগ পান লোকপ্রসাশন বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. রশিদুল ইসলাম শেখ। 

একই বিজ্ঞপ্তিতে ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালক পদে যোগদানের দিন থেকে তিনি লোকপ্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত হবেন বলে উল্লেখ করা হয় এবং বিভাগটিতে নতুন বিভাগীয় প্রধান নিযুক্ত করা হয়। 

তবে ভিন্নতা দেখা যায় অতিরিক্ত পরিচালক ড. বনানী বিশ্বাসের ক্ষেত্রে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনা থাকলেও তার নিয়োগে মানা হচ্ছে না সেই নির্দেশনা। তিনি একই সাথে আইকিউএসি’র অতিরিক্ত পরিচালক এবং ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। 

গত ১৬ মার্চ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অফিস আদেশে ড. বনানী বিশ্বাসের মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। যদিও গত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ থেকে তিনি ইংরেজি বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।

আবার সম্প্রতি তাকে একটি হলের প্রাধ্যক্ষও নিযুক্ত করা হতে পারে বলে গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাক্তিভেদে নিয়ম প্রয়োগে প্রশাসনের এমন ভিন্ন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক।

তবে অতিরিক্ত পরিচালক ড. বনানী বিশ্বাস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের লেটারে বিভাগের চেয়ারম্যান পদে থাকতে পারবে না এমন কোন কথা উল্লেখ নেই। 

একইসাথে এমন দুটি পদে থাকা বৈধ কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বৈধ কিংবা অবৈধ আমি সে প্রশ্নের উত্তর দিব না। আপনি সাংবাদিক হিসাবে এটি তদন্ত করে দেখুন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এফ. এম. আব্দুল মঈন বলেন যোগ্য লোকবল সংকটে এ পদে নতুন কাউকে দেয়া যাচ্ছে না। আমরা নতুন কাউকে নিয়োগ দোয়ার কথা ভাবছি। তবে এই নিয়োগে আমরা শুধু পদের সময় সময় বৃদ্ধি করেছি। নিয়োগ আগের।

এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের স্ট্রাটেজিক প্ল্যানিং এন্ড কোয়ালিটি এসিউরেন্স ডিভিশনের পরিচালক ড. মোঃ ফখরুল ইসলাম জানান, আমরা এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন দিয়েছি। যারা পরিচালক অথবা অতিরিক্ত পরিচালক হবেন তাদের বিভাগে সর্বোচ্চ দুটি কোর্স পরিচালনা করতে পারবেন। তবে এর ব্যাত্যয় ঘটলে সেটি উপর মহলের নজরে আনা উচিত। 

তবে এ বিষয়ে আমি তেমন কোন মন্তব্য করতে চাই না। আপনি কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।