ইডেনে নির্যাতিত দুই ছাত্রীকে অভিভাবকের হাতে তুলে দিল প্রশাসন

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২২, ০৩:৪২ পিএম

রাজধানীর ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভার একটি অডিও ভাইরাল হওয়ার পর একে কেন্দ্র করে তিনি দুই ছাত্রীকে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। 

এদিকে রিভার বিরুদ্ধে কলেজ প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ভুক্তভোগীদের বাড়ি পাঠানোর অভিযাগ উঠেছে। কলেজের রাজিয়া বেগম ছাত্রীনিবাসের প্রাধ্যক্ষ নারগিস রুমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।

কয়েকদিন আগে প্রোগ্রামে না যাওয়ায় ইডেন কলেজের রাজিয়া ছাত্রী নিবাসে ২ ছাত্রীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা।

গত মঙ্গলবার রাতে পুনরায় তার বিরুদ্ধে ওই দুই ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে সাড়ে ৬ ঘণ্টা আটকে মানষিক ও শারীরিক নির্যাতনের করার অভিযোগ ওঠে। মঙ্গলবার রাতেই ছাত্রীনিবাস প্রশাসন ওই দুই ছাত্রীকে অভিভাবকের হাতে তুলে দেয়।

তারা দুইজন বর্তমানে বাড়িতে অবস্থান করেছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। দুই ছাত্রী বলেন, তাদের অভিভাবকদের সহায়তায় তাদেরকে প্রশাসন বাড়িতে পৌঁছে দেয় গত রাতে। এর থেকে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তারা।

এ ঘটনার কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, ছাত্রলীগ নেত্রী রিভার নির্যাতন ও হুমকির শিকার দুই শিক্ষার্থী হল প্রাধ্যক্ষ নারগিস রুমা তার চেয়ারে বসে আছেন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘তোমরা এখনই বাড়ি চলে যাও। আমি বলছি, তোমরা এখনই বাড়ি চলে যাবে।’

এরপর বিভিন্ন কথার পর প্রাধ্যক্ষকে আবার বলতে শোনা যায়, ‘শোনো (ভুক্তভোগীদের একজন), তুমি যেতে চাচ্ছো না, কিন্তু এখন তোমরা দুই গ্রুপের মধ্যে পড়ে গেছো। কোনো একটা গ্রুপ তোমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এই দায় কে নেবে?’

এরপর ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বলেন, ‘তাহলে ম্যাম এখন আমাদের কী করা উচিত?’ তখন প্রাধ্যক্ষ বলেন, ‘তোমরা এখনই বাড়ি চলে যাও।’

এ সময় পাশ থেকে আরেকজনকে বলতে শোনা যায়, ‘রাতে রাখা যায় কি না...।’ তখন কলেজ ছাত্রলীগের এক নেত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘ম্যাম, রাতে রাখার দরকার নেই।’ আরেকজন বলেন, ‘ম্যাম, রাতে রাখা যাবে না।’

এরপর নারগিস রুমা বলেন, ‘না, রাতে রাখা যাবে না। তুমি বোঝো! রাতে কোনো ঘটনা ঘটলে এই দায় কে নেবে?’

এদিকে ছাত্রীদের আটকে রেখে মিথ্যা জবানবন্দি নেওয়ার বিষয়ে তামান্না জেসমিন রিভা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সব ডিজিটাল কারসাজি  মিথ্যাচার। এটা তাদের একটা নতুন কৌশল। কেউ মিথ্যা কথা বললে তো আমাদের আর কিছু করার নেই। 

আমাদের কলেজের প্রিন্সপাল, হল সুপার ম্যাডামরা আছেন, তাদের সাথে কথা বলে দেখেন এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না। আমি রাজনৈতিক পরিবার থেকে বেড়ে উঠেছি। ছাত্রলীগও আমাকে হেয় করতে পরিকল্পিতভাবে এই চক্রান্ত করা হয়েছে। আমি এর নিন্দা জানাই।’

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ২৫ আগস্ট ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের উদ্যোগে শোক দিবসের আলোচনা সভা ছিল। এই প্রোগাম নিয়ে আমি ও কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক খুব ব্যস্ত ছিলাম। এখানে যারা অডিও প্রকাশ করেছে তাদের সঙ্গে দেখা বা কথা বলার মত কোনো সুযোগই আমাদের ছিল না। 

প্রোগামটা যাতে করতে না পারি এর জন্য কয়েকজন নেত্রী উঠে পড়ে লেগেছিল। যারা বিএনপির এজেন্ট। এই কারণে তারা কয়েকদিন ধরেই নানা ধরনের কৌশল করছেন। 

কমিটি গঠনের পরে আমরা সুন্দরভাবে একটা কর্মসূচি পালন করি এটা তারা চায়নি। তাই মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাদের বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।’

এ সকল অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভাকে বারবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।


আমারসংবাদ/টিএইচ