ঢাবির অবহেলায় ছয় মাস আটকে আছে ৭ কলেজের ফলাফল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২২, ০৮:৪৮ পিএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবহেলার কারণে পরীক্ষার ৬ মাস পরেও অধিভুক্ত সাত কলেজের মাস্টার্স বিশেষ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। এরা ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী। অর্থাৎ এক বছরের মাস্টার্স শেষ হতে সময় লাগছে ৫ বছরের বেশি।  অন্যদিকে অনার্স-মাস্টার্স মিলিয়ে ৫ বছরের কোর্স এক যুগেও শেষ হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়া প্রথম ব্যাচ এটি। অনার্স শেষ বর্ষে এসে অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকেই চলছে সেশনজন। ২০১২ সালে অনার্সে ভার্তি হয়ে মাস্টার্স শেষ হতে ২০২২ সাল শেষ হয়ে যাচ্ছে।    

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একের পর এক সেশনজট, ভুল ফলাফল, কারণ ছাড়াই ফেল করিয়ে দেয়াসহ শত সমস্যায়  অতিষ্ট অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা। কলেজ বিবেচনায় ঢালাও ফেল করিয়ে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। ঢাকা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ নেহাল আহমেদের কলেজ বিবেচনায় ফেল করিয়ে দেয়া সংক্রান্ত এক বক্তব্যের রেফারেন্স টেনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা এমন অব্যবস্থাপনার দ্রুত সমাধান চেয়েছেন।

জানা যায়, ২০১৭ সালে ঢাকার স্বনামধন্য ৭টি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। সেই থেকে ৭ কলেজের প্রায় ৩ লাখ শিক্ষার্থী মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়ে আসছে। সাত কলেজের ২০১৬ সালের অনার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ২০১৮ সালে। অথচ সমসাময়িক ব্যাচের  শিক্ষার্থীরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাশ করে অনেক আগেই বের হয়ে গেছে । ২০১৭ সালের মাস্টার্স পরীক্ষা হয় ২০২২ সালে। বিস্ময়করভাবে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর  ফলাফল কমপক্ষে ১ বিষয় ফেল আসে। অথচ তারা ভালোভাবে পরীক্ষা দিয়েছিল। পরীক্ষায় ফেল আসার কথা না। সেই ১টি বিষয়ের বিশেষ পরীক্ষা হয় ২০২২ সালে মার্চ মাসের প্রথম দিকে। সেই বিশেষ পরীক্ষার ফলাফল ঢাবি কর্তৃপক্ষ এখনো প্রকাশ করেনি।

সাত কলেজের পরীক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট এমন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরীক্ষা কমিটির সভাপতির ভুলের কারণে ফলাফল আটকে আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের এক ছাত্র জানান, ৭ কলেজের সকল শিক্ষার্থী ঢাবির কাছে জবাব চাই কেন ফলাফল প্রকাশিত হচ্ছে না। তারা ৭ কলেজের জন্য এত নিন্মমানের ওয়েবসাইট কেনো করবে? ৭ কলেজের বাজেট তো কম নাই। আমাদের জীবন নিয়ে খেলা করা তাদের কোনো অধিকার নেই। আমি সরেজমিনে তাদের আইটি টিমের সাথে কথা বলতে চাই। যেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কল/হেল্প সেন্টার খুলতে পারে, সেখানে ৭ কলেজের জন্যও খুলতে হবে। তারা আমাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। ৩ লাখ শিক্ষার্থীকে যদি তারা বোঝা মনে করে, তাহলে কেনো নিয়েছিলো অধিভুক্ত করে।

কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণের  নামে টাকা খাওয়ার ধান্ধাও করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কোন কিছুর জন্য তাদের কাছে সাহায্যে চাইলে পাশ কাটিয়ে যায়। এই বিল্ডিং থেকে ঐ বিল্ডিং এ যাওয়া-আসা করতে হয়। সব কিছুর সুষ্ঠু সমাধান চায় ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা। অনতিবিলম্বে ফলাফল প্রকাশের দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। 
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান অসুস্থ থাকার অজুহাতে ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সূত্র জানায়, একবার ফলাফল তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বড় ধরণের ত্রুটি থাকায় ফলাফল প্রকাশ না করে পুনরায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।

ফলাফল বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী এই বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। সাত কলেজের পরীক্ষার ফলাফলের তথ্য জানতে এই প্রতিবেদককে লিখিত আবেদনের পরামর্শ দেন তিনি।

এসএম