বাংলাদেশে যে বইগুলো নিষিদ্ধ হয়েছিল

আমার সংবাদ ডেস্ক: প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪, ০৭:২৫ পিএম

বাংলাদেশে  বিভিন্ন সময় নিষিদ্ধ হওয়া বইয়ের সংখ্যা খুবই কম। নানা সময় ইতিহাস বিকৃতি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, রাজনৈতিক বিতর্ক বা অশ্লীলতা - এমনসব কারণ দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ কোনও কোনও বইকে নিষিদ্ধ বা মুদ্রণ, প্রকাশনা, বিতরণ ও বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল।

কোনটি আবার প্রকাশের পর করা হয়েছিল বাজেয়াপ্ত।
এসব বইয়ের মধ্যে ফিকশন, নন-ফিকশন - উভয় ধরনের বইই রয়েছে। সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি কিংবা প্রকাশকদের কাছ থেকে নিষিদ্ধ এবং বাজেয়াপ্ত এসব বইয়ের সঠিক সংখ্যা সম্পর্কে একক কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি।

অবিভক্ত ভারতে প্রথম নিষিদ্ধের কবলে পড়ে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ব্রিটিশ সরকার তার ৫টি বই  নিষিদ্ধ করেছিল। বিষের বাঁশি  নজরুলের রচিত প্রথম নিষিদ্ধ গ্রন্থ। এ গ্রন্থটি আগস্ট ১৯২৪ প্রকাশিত হয় এবং অক্টোবর ১৯২৪ সালে নিষিদ্ধ হয়। তার মোট নিষিদ্ধ গ্রন্থ হলো ৫ টি - বিষের বাঁশি, ভাঙার গান, প্রলয় শিখা, চন্দ্রবিন্দু, যুগবাণী।

স্বাধীনতার পর কয়েক বছরের মধ্যেই কবিতা লিখে আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়ে এক পর্যায়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন কবি দাউদ হায়দার। আলোচিত ‘কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নায় কালো বন্যায়’ নামে কবিতাটি ১৯৭৪ সালে দৈনিক সংবাদ পত্রিকার সাহিত্য পাতায় ছাপা হয়েছিল।

নারী

নারী ১৯৯২ সালে একুশে বইমেলায় প্রথম প্রকাশিত হয়। নারীবাদ নিয়ে লেখা ৪০৮ পৃষ্ঠার বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর পরই ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের লেখা ‘নারী’ 
বইটি ইসলাম ধর্ম এবং ধর্মবিদ্বেষী বলে অভিযোগ করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বইটি বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করার জন্য আবেদন করেন। এরপর ১৯৯৫ সালের ১৯শে নভেম্বর তৎকালীন সরকার বইটি নিষিদ্ধ করে। এরপর ২০০০ সালের সাতই মার্চ বইটির ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ অবৈধ বলে রায় দেয় আদালত।

অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ তার বহুমাত্রিক লেখালেখির জন্য সুপরিচিত ছিলেন। পরবর্তীতে তার আরো কয়েকটি বই নিয়ে সমালোচনা-বিতর্ক হয়েছে।বিশেষ করে তার ‍‍`পাক সার জমিন সাদ বাদ‍‍` উপন্যাস প্রকাশের পর ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন তার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলো।

লজ্জা
লজ্জা বইটি ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয়, এবং প্রকাশনার ছয় মাসের মাথায় বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।  তার লেখা ‍‍`লজ্জা‍‍` উপন্যাসটি বইটিকেই বাংলাদেশে প্রথম নিষিদ্ধ বই হিসেবে দাবি ধরা হয়। ভারতে বসবাসরত বাংলাদেশি নারীবাদী লেখক তসলিমা নাসরিনের বেশ কয়েকটি বই নিষিদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশে। উপন্যাসটি ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনাকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে লেখা হয়েছিলো।

বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের কয়েকটি রাজ্য, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং ভুটানেও এই বইটি নিষিদ্ধ হয় পরবর্তীতে।

‍‍`ক‍‍`
তসলিমা নাসরিনের লেখা আরেকটি বই ‍‍`ক‍‍` ২০০৩ সালে প্রকাশিত এবং নিষিদ্ধ হয়। লেখক বইটিকে আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস বলে বর্ণনা করেছেন।
বইয়ে তিনি বিভিন্ন সময়ে তার নিজের ওপর ঘটা যৌন নিপীড়নের কথা তুলে ধরেছেন। এতে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন পরিচিত লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিকের নাম উল্লেখ করেছিলেন তিনি। অভিযুক্তরা সবাই যৌন নিপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের মধ্যে একজন তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার একটি মানহানির মামলা করেছিলেন, এবং মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বই বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। পরে ২০১৫ সালে সে মামলাটি আদালত খারিজ করে দেয়।

সে সময় কলকাতায় বইটি ‘দ্বিখণ্ডিত’ নামে প্রকাশিত হয়। সেখানেও আদালতের আদেশে প্রাথমিকভাবে তা নিষিদ্ধ ছিল। পরে সেটি বাজারে ছাড়ার অনুমতি দেয়া হয়।

রাজনৈতিক কারণে নিষিদ্ধ বাংলাদেশে ১৯৯৯ সালের মার্চে ‘আমার ফাঁসি চাই’ নামক একটি বই প্রকাশিত হয়, এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সরকার বইটি নিষিদ্ধ করে।

বইয়েে মাধ্যমে লেখক মতিয়ুর রহমান রেনটু ইতিহাস বিকৃতি এবং রাজনৈতিক বিতর্ক ছড়িয়েছেন এমন অভিযোগে বইটি নিষিদ্ধ করা হয়।

এরপর ২০২০ সালে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদের লেখা ‘রেভোলিউশন, মিলিটারি পারসোনেল অ্যান্ড দ্য ওয়ার অব লিবারেশন ইন বাংলাদেশ’ নামে একটি বই নিষিদ্ধ ও বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। বইটি ২০০৮ সালে প্রকাশিত হয়। বিএনপির সাবেক নেতা মি. আহমদের বইটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগে নিষিদ্ধ ও বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেয় আদালত। সূত্র: বিবিসি

/এনএইচ/বিআরইউ