শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাত্যহিক সমাবেশের শপথবাক্য আগের রূপে ফেরানো হয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগের শাসনামলে শপথবাক্যে যুক্ত হওয়া ‘মুক্তিযুদ্ধ’, ‘শেখ মুজিবুর রহমান’ ও ‘শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে না দেওয়ার’ প্রত্যয়ের অংশগুলো বাদ পড়েছে।
নব্বই দশক ও একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে শপথ নেওয়া হতো, পুনরায় সে শপথ বাক্যটিই পাঠ করতে বলা হয়েছে। তবে তার সঙ্গে নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে ‘অন্যায় ও দুর্নীতি করবো না’ এবং ‘অন্যায় ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবো না’ অংশ দুটি।
সাম্যের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ করতে এ ‘শপথ’ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাত্যহিক সমাবেশে পাঠ করানোর জন্য অনুরোধ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বুধবার (২১ মে) এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাম্যের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ করতে নিম্নোক্ত দিকনির্দেশনামূলক একটি ‘শপথ’ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাত্যহিক সমাবেশে পাঠ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
নতুন শপথ–
‘আমি শপথ করিতেছি যে, মানুষের সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখিবো। দেশের প্রতি অনুগত থাকিবো। দেশের একতা ও সংহতি বজায় রাখিবার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকিবো। অন্যায় ও দুর্নীতি করিবো না এবং অন্যায় ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিবো না।’
‘হে মহান আল্লাহ/ মহান সৃষ্টিকর্তা আমাকে শক্তি দিন, আমি যেন বাংলাদেশের সেবা করিতে পারি এবং বাংলাদেশকে একটি আদর্শ, বৈষম্যহীন ও শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়িয়া তুলিতে পারি। আমিন।’
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), সব জেলা শিক্ষা অফিসসহ সংশ্লিষ্ট অফিস প্রধানকে অনুরোধ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের শাসনামলে ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক আদেশে শপথ পরিবর্তন করা হয়েছিল।
সেসময় জাতীয় সংগীতের পর যে শপথ পাঠ করতে বলা ছিল তা হলো –
‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বিশ্বের বুকে বাঙালি জাতি প্রতিষ্ঠা করেছে তার স্বতন্ত্র জাতিসত্তা। আমি দৃপ্তকণ্ঠে শপথ করছি যে, শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না।’
‘দেশকে ভালোবাসবো, দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করবো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ে তুলবো। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাকে শক্তি দিন।’
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ২০ আগস্ট আগের (নব্বই দশকের নির্ধারিত) শপথবাক্য প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পিটিআইয়ে জাতীয় সংগীতের পর পাঠের নির্দেশনা দিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
এ শপথ বাক্যে বলা হয়েছিল –
‘আমি শপথ করিতেছি যে, মানুষের সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখিবো। দেশের প্রতি অনুগত থাকিবো। দেশের একতা ও সংহতি বজায় রাখিবার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকিব। হে মহান আল্লাহ/মহান সৃষ্টিকর্তা, আমাকে শক্তি দিন, আমি যেন বাংলাদেশের সেবা করিতে পারি এবং বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী ও আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে গড়িয়া তুলিতে পারি। আমিন।’
এবার নতুনভাবে ‘অন্যায় ও দুর্নীতি করিবো না এবং অন্যায় ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিবো না’ বাক্য দুটি শপথে যুক্ত হয়েছে।
আরএস