যবিপ্রবিতে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ১১ মাস পেরোলেও হয়নি বিচার

রুহুল আমিন, যবিপ্রবি প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২৫, ০৫:৫৩ পিএম

জুলাই বিপ্লবের ১১ মাস পার হলেও শিক্ষার্থী নির্যাতন ও হত্যার হুমকির অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিচার করতে পারেনি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) প্রশাসন। 

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন ও অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিপ্লবের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের জেরে ২০২৩ সালের ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে তাদের হল থেকে বের করে দেয়। প্রথম দফায় সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান শিহাব (পিইএসএস), সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম হৃদয় (এফবি), রাকিব হাসান (এফবি) ও ফাহিম মোর্শেদ (ফার্মেসি) মারধর করে হল থেকে বের করে দেন।

পরে গভীর রাতে দ্বিতীয় দফায় হামলা চালানো হয়। নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম ইকরামুল কবীর দ্বীপ (এফএমবি)। 

অভিযুক্তদের মধ্যে রাকিব হাসান এখনো ক্যাম্পাসে অবাধে চলাফেরা করছেন এবং পরীক্ষা দিয়েছেন, অথচ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়া, অভিযুক্তদের সহযোগিতায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে জিইবিটি বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেত্রী আসমা সাদিয়া সূচি-র বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি জুলাইয়ের রাতে হল নির্যাতনের পরিকল্পনায় অংশ নেন এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দিকনির্দেশনা দিয়ে নির্যাতন উৎসাহিত করেন। একইভাবে ইইই বিভাগের ছাত্র জহুরুল ইসলাম সাগর আন্দোলনকারীদের তথ্য সংগ্রহ করে গ্রুপে সরবরাহ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

নির্যাতনের শিকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সামিউল আজিম বলেন, "জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে আমি হামলার শিকার হই এবং হল ছাড়তে বাধ্য হই। এরপর বর্তমান ভিসি আসার পর অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি ভিসি স্যার আমাদের খোঁজও নেননি।"

এছাড়া, টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব বিন মোত্তালিব ছাত্র নির্যাতনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার পরেও এক অদৃশ্য বলয়ের কারণে অবাধে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন, যা নিয়েও ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

গত ৩ আগস্ট আন্দোলনকারীরা প্রধান ফটকে ‘জুলাই বিপ্লব’ গ্রাফিতি আঁকলে মধ্যরাতে ছাত্রলীগ নেতারা তা মুছে দেয় এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের “শিবির” আখ্যা দিয়ে সরাসরি হত্যা হুমকি দেয়। এ ঘটনারও বিচার হয়নি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, "আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আবেদনের ভিত্তিতে কিছু ঘটনার তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নির্যাতনের ঘটনার যথাযথ ডকুমেন্টস প্রদান করলে দ্রুত বিচার কার্যক্রম শুরুর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রশাসনের দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

ইএইচ