একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে আগুনের হলকায় ছিন্নভিন্ন করেছিল ভবন, স্বপ্ন আর জীবনের গতিপথ। সেই ভয়াল ঘটনার ১২ দিন পর আজ সীমিত পরিসরে খুলেছে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন কলেজ।
তবে আজকের দিনে কোনো পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়নি। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নিঃশব্দ শোকযাত্রার মতো ফিরে এসেছেন পরিচিত শ্রেণিকক্ষে।
রোববার সকাল ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা কলেজের মূল ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে থাকেন। কিন্তু সেদিনের মতো আজ নেই কোনো কোলাহল, নেই প্রাণচাঞ্চল্য। সকাল সাড়ে ১০টায় কলেজ প্রাঙ্গণে শুরু হয় মিলাদ মাহফিল ও শোকসভা।
এতে অংশ নেন কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা।
শ্রেণিকক্ষগুলোতে কিছু শিক্ষার্থীকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখা গেছে। কথা বলছেন ধীরে, বিনিময় করছেন পারস্পরিক কুশলাদি।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিরা বলেন, “প্রতিদিন যেই ভবনের সামনে দিয়ে হেঁটে ক্লাসে যেতাম, আজ সেখানে শুধুই পোড়া গন্ধ আর শূন্যতা। আজ কোনো ক্লাস হয়নি, এসেছি শুধু বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে।”
কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল বলেন, “শিক্ষার্থীরা যেন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে, এ জন্যই সীমিত পরিসরে ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারছে, যা তাদের মানসিক প্রশান্তিতে সহায়তা করবে।”
তিনি আরও জানান, কলেজে আজও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি, বিমান বাহিনীর সহায়তায় একটি মেডিকেল ক্যাম্প চালু রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে পরামর্শ পাচ্ছেন। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে নিয়মিত কাউন্সেলিং করছেন। কেউ চাইলে ব্যক্তিগতভাবে একান্ত আলাপের সুযোগও পাচ্ছেন।
শাহ বুলবুল বলেন, “এই দুঃসময়ে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সহানুভূতি ও মানবিকতা মাইলস্টোন কলেজের সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে উঠেছে।”
প্রসঙ্গত, গত ২১ জুলাই ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ তিন দফায় ছুটি ঘোষণা করে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি ২ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ ছিল। এ সময় চালু ছিল প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং আহতদের সহায়তায় গঠিত একটি কন্ট্রোল রুম।
ইএইচ