জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি ও স্পেকট্রামনীতি উন্নয়ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি প্রকৌশলী আমির উজ্জামান টুটুল।
আগামী ২০২৯ সাল পর্যন্ত ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) যুক্তরাষ্ট্রের একজন বৈজ্ঞানিক প্রতিনিধি হিসাবে এ কর্মসূচিতে কাজ করবেন তিনি। দায়িত্ব পালনের জন্য ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাকে কূটনৈতিক অফসিয়াল (লাল পাসপোর্ট) প্রদান করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলী টুটুল। এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস।
টুটুল যুক্তরাষ্ট্রের একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা এবং ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ)-এর স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মার্কিন প্রতিনিধিদলের একজন বৈজ্ঞানিক বিশেষজ্ঞ হিসাবে জাতিসংঘে ইন্টারন্যাশনাল টেলেকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) এর প্রযুক্তিগত বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত থাকবেন।
তিনি জাতিসংঘের সদর দপ্তর জেনেভা, সুইজারল্যান্ডসহ পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশে অবস্থিত জাতিসংঘ, ইন্টারন্যাশনাল টেলেকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) এর আঞ্চলিক কনফারেন্সগুলোতে (এশিয়া, ইউরোপ, ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা, অষ্ট্রেলিয়া ইত্যাদি) এফএএ`র যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। প্রতি বছর আনুমানিক ৩ থেকে ৪ বার এই আঞ্চলিক কনফারেন্সগুলোতে অংশ নেবেন। প্রতিটি অধিবেশন ২-৩ সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের নীল ও লাল পাশপোর্টধারী আমির উজ্জামান টুটুলের ফিল্ড অব এক্সপার্টিজ, এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং, রাডার ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার (ই-ডাব্লিউ), দূরপাল্লার মিসাইল, সেন্সর, অ্যাটাক, জ্যামিং, স্যাটেলাইট, মহাকাশ এবং নাসার ডিপ স্পেস সায়েন্টিফিক রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ডিজাইন, ৫-জি এনআর, ৪-জি এলটিই, ডোমেস্টিক ও আন্তর্জাতিক ফ্রিকোয়েন্সি স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট, আর্কিটেকচার, ডিজাইন, ইমপ্লিমেন্টেশন এবং পারফরমেন্স অ্যানালাইসিস ইত্যাদি।
এছাড়াও আমেরিকান স্পেস ইন্জিনিয়ারিং এজেন্সি, নাসার মহাকাশ বিজ্ঞান-ফ্রিকুয়েন্সি এ্যালোকেশন এবং ইন্টারফারেন্স, রাডার ও ফিক্সড ওয়ারলেস পদ্ধতি এবং আন্তর্জাতিক টেরেস্ট্রিয়াল আইএমটি, ৬-জি সিস্টেমস উন্নয়ন এর বিশেষজ্ঞ হিসাবে জাতিসংঘ অধিবেশনে এফএএ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করবেন। পাশাপাশি অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিজ্ঞানী হিসাবে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি উন্নয়নে মতবিনিময় বা পরামর্শ আদান-প্রদান সভাগুলোতে অংশগ্রহণ করবেন। অধিবেশনগুলোতে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি ও স্পেকট্রাম নীতি উন্নয়ন এবং ইলেকট্রনিক সিস্টেমস, এফএএ এর প্রযুক্তিগত প্রয়োজনীয়তা, ফ্লাইং জনগণের সুবিধার বিবেচনায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং ন্যাশনাল এয়ারস্পেস সিস্টেম (এনএএস) নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নিরবচ্ছিন্ন ঝুঁকির অপ্রত্যাশিত হস্তক্ষেপ রোধ করার বিষয়গুলি তিনি আলোচনা করে নিশ্চিত করবেন।
উল্লেখ্য টুটুল রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ্যপ্লাইড ফিজিক্স অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইন্জিনিয়ারিং এ ব্যাচেলর এবং মাস্টার ডিগ্রি শেষ করেন। পরে তিনি আমেরিকার হার্ডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ মাস্টার ডিগ্রি এবং কানেকটিকাট স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ)সহ মোট ৩টি বিষয়ে মাস্টার ডিগ্রি লাভ করেন।
২০১৯ সালে তিনি নিউ ইয়র্কের বিংহ্যামটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম শুরু করেন কিন্তু ২০২০-২০২২ সাল পর্যন্ত মরণব্যাধি কোভিডের কারণে মাঝপথে এসে তার পিএইচডি প্রোগ্রাম থমকে যায়। তবে এফএএ`র মাধ্যমে তার পিএইচডি প্রোগ্রামের বাকি কাজগুলো শেষ করবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
টুটুল রাজশাহী শহর কোর্ট অঞ্চলের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রয়াত আলহাজ আব্দুল মজিদ ও প্রয়াত আলহাজ খোকন বেগমের পুত্র। নওগাঁ ও দিনাজপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক ও যুগ্মসচিব (অবঃ) লুৎফর রহমানের জামাতা। তিনি বাল্যকাল পার করেছেন রাজশাহী শহরের কোর্ট অঞ্চলে। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট এবং ফুটবল ছিল তার প্রিয় খেলা। তাই এখনও তিনি যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির যুবক, কিশোরদের বিভিন্ন খেলাধুলার সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেখেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে স্বপরিবারে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। কানেকটিকাট তথা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিরা তার এ বিশেষ কৃতিত্বের জন্য গর্বিত। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বাংলাদেশিরা অনেক বুদ্ধিমান, মেধাবী, পরিশ্রমী এবং তাদের নিজেদের পেশাগতভাবে তারা খুব মনোযোগী। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টর যেমন ইন্জিনিয়ারিং, বিজ্ঞান, শিক্ষা, চিকিৎসা, সাংবাদিকতা, ব্যবসা, অর্থনীতি, আইন, অন্যান্য কারিগরি এবং প্রশাসনিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে দক্ষতা এবং সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি মনে করেন আমাদের এই মেধাবী প্রজন্ম বাংলাদেশকে অচিরেই যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিটি স্তরে উপস্থাপন করতে সক্ষম হবে।
বিআরইউ