কিংবদন্তি পরিচালক তরুণ মজুমদার মারা গেছেন

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২২, ০৩:৩৫ পিএম

পশ্চিমবঙ্গের অত্যন্ত জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার মারা গেছেন। সোমবার (৪ জুলাই) সকালে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯১ বছর। তিনি কিছুদিন ধরে কিডনি ও হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন। 

গত ১৪ জুন তরুণ মজুমদারকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় কয়েক দিনের মধ্যেই তাকে উডবার্ন ওয়ার্ড থেকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করা হয় বলে জানা যায়। পরে সেখানে অবস্থার কিছুটা উন্নতিও হয়।

কিন্তু সম্প্রতি আবার অবনতি হতে থাকে তার শারীরিক অবস্থার। রোববার তাকে আবারও ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। সেখান থেকে আর তাকে ফেরাতে পারেননি চিকিৎসকরা।

বাংলাদেশের বগুড়ায় ১৯৩১ সালের ৮ জানুয়ারি জন্মগহণ করেন তরুণ মজুমদার। বাবা বীরেন্দ্রনাথ মজুমদার ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। তরুণের পড়াশোনা কলকাতাতেই। সেন্ট পলস্‌ ক্যাথিড্রাল মিশন কলেজ এবং স্কটিশ চার্চ কলেজের ছাত্র তরুণ পরে রসায়ন নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। 

তরুণের ফিল্ম জগতে পদার্পণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করার পরই। ১৯৫৯ সালে প্রথম ফিল্ম পরিচালনায় আসেন তিনি। উত্তম কুমার সুচিত্রা অভিনীত ‘চাওয়া পাওয়া’ ছবিটি দিয়ে। তখন তার বয়স ২৮ বছর। তবে 'চাওয়া পাওয়া'-য় তরুণ মজুমদার একা পরিচালক ছিলেন না। 

তিনি, শচীন মুখোপাধ্যায় এবং দিলীপ মুখোপাধ্যায় মিলে তৈরি করেছিলেন যাত্রিক। যাত্রিকই ছিল 'চাওয়া পাওয়া'-র পরিচালক। বছর চারেক যাত্রিকের সঙ্গে ছিলেন তরণ মজুমদার। তারপর নিজে পরিচালনার কাজ শুরু করেন।

তরুণ মজুমদার ১৯৬২ সালে ‘কাচের স্বর্গ’সিনেমার জন্য ভারতের প্রথম জাতীয় পুরস্কার পান। মোট চারটি ভারতের জাতীয় পুরস্কারজয়ী এই পরিচালক দেশটির পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন ১৯৯০ সালে। এ ছাড়াও, বিএফজেএ পুরস্কার এবং আনন্দলোক পুরস্কারেও সম্মানিত করা হয়েছিল পরিচালককে।

তরণ মজুমদারের জনপ্রিয় ও প্রশংসিত সিনেমার মধ্যে আছে, বালিকা বধূ, দাদার কীর্তি, শ্রীমান পৃথ্বীরাজ, ভালোবাসা ভালোবাসা, আপন আমার আপন, গণদেবতা, অমরগীতি, সংসার সীমান্তে, পলাতক, নিমন্ত্রণ ও আলো। 

তরুণ মজুমদারের সর্বশেষ ছবি ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ভালোবাসার বাড়ি’। একই বছর ‘অধিকার’ নামে একটি তথ্যচিত্রও করেছিলেন তিনি।

এ ছাড়া তরুণ মজুমদারের উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে ‘গণদেবতা’, ‘কাচের স্বর্গ’, ‘যদি জানতেম’, ‘পলাতক’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘শহর থেকে দূরে’, ‘মেঘমুক্তি’, ‘বালিকা বধূ’, ‘কুহেলি’, ‘চাঁদের বাড়ি’। তরুণ মজুমদারের ছবিতে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে সন্ধ্যা রায় ও তাপস পালকে। এর মধ্যে সন্ধ্যা করেছেন ২০টি, তাপসকে দেখা গেছে আটটি ছবিতে।

বারবার নতুন নায়ক-নায়িকাকে তুলে এনেছেন তিনি। কাচের স্বর্গে তিনি নায়ক করেন দিলীপ মুখোপাধ্যায়কে। বালিকা বধূতে মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, দাদার কীর্তিতে তাপস পালের মতো প্রচুর উদাহরণ আছে, যেখানে আনকোরা নায়ক-নায়িকাকে নিয়ে কাজ করে সফল হয়েছেন তরুণ মজুমদার।

সেই মানুষটি চলে গেলেন। টলিউডে একটা যুগাবসান ঘটলো। 


আমারসংবাদ/টিএইচ