দাবানলে হাওয়াইয়ে নিহত ৩৬

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২৩, ০৭:২৭ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসগারীয় অঙ্গরাজ্য হাওয়াইয়ের মাউয়ি দ্বীপে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ দাবানলে অন্তত ৩৬ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন এবং আহত হয়েছেন আরও বহুসংখ্যক। বুধবার রাতে  এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে মাউই প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ।

হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের অন্যান্য দ্বীপের মতো এই দ্বীপটিও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষনীয়। তাদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু মূলত মাউইয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লাহাইনা। দ্বীপটির অধিকাংশ হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট এই শহরটিতে অবস্থিত। হাওয়াইয়ের দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তর ও স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, দাবানলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লাহাইনা।

ড্রোন দিয়ে তোলা একাধিক ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, বিশাল বিস্তৃত দাবানলে লাহাইনার একের পর এক সড়ক থেকে কালো ধোঁয়ার কুন্ডলি উঠছে। অনেক পর্যটক স্থানীয় বাসিন্দা আগুনের আঁচ থেকে বাঁচতে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন— এমন দৃশ্যও ধরা পড়েছে ভিডিওগুলোতে।

মাউই ফায়ার সার্ভিসের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম হনোলুলু স্টার জানিয়েছে, ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে লাহাইনা শহরের অন্তত ২৭১টি ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এসব ভবনের মধ্যে অনেক বহুতল হোটেলও ছিল।

লাহাইনার স্থানীয় বাসিন্দা ম্যাসন জারভি বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমি আমার জীবনে এত বড় বিপর্যয় দেখিনি। পুরো লাহাইনা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে যেন একটা যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে আছি… টাইম বোমা দিয়ে পুরো শহর উড়িয়ে দিয়েছে কেউ।’

নিজের মোবাইল ফোনে তোলা অগ্নিকাণ্ডের বিভিন্ন ছবি রয়টার্সকে দেখিয়েছেন তিনি। আগুন থেকে নিজের পরিবারের সদস্যদের বাঁচাতে গিয়ে তার শরীরের একাধিক জায়গায় ফোস্কা পড়েছে— সেসবও দেখান ম্যাসন।

মাউই দ্বীপের বিভিন্ন হাসপাতাল আহত ও দগ্ধ রোগীতে ভরে উঠেছে বলে জানা গেছে। প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লাহাইনা দ্বীপে এখন দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তর ও জরুরি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের উদ্ধারকারী কর্মী ব্যতীত আর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

পর্যটক/ স্থানীয়দের অবস্থা

বুধবার ভোর থেকে দাবানল শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১১ হাজারেও বেশি পর্যটকদের লাহাইনা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শহরটির অধিকাংশ সড়কে যান চলাচল বন্ধ করা হলেও বিমানবন্দরগামী সড়কগুলো খোলা রাখা হয়েছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন মাউই প্রশাসনের পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তা এড স্নিফেন।

লাহাইনার সৈকতে পর্যটকদের নৌকা ভাড়া দেওয়া ব্যাবসার সঙ্গে যুক্ত ডাস্টিন জনসন বলেন, ‘আগুন লাগার পর অনেক পর্যটক হোটেল-রিসোর্ট ছেড়ে সৈকতের দিকে ছুটে আসছিলেন। আমি এবং অন্যান্য ব্যবসায়ীরা নিজেদের নৌকায় তাদের বেশ কয়েকজনকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিয়েছি।

আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে অনেক পর্যটক সাগরে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড বাহিনী উদ্ধার করেছে।

হাওয়াই রাজ্যের বাণিজ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পর্যটন বিভাগের প্রধান জিমি টোকিওকা রয়টার্সকে বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন সবকিছু হারিয়েছেন। ঘরবাড়ি, অর্থসম্পদ, কৃষি এমনকি গৃহপালিত পশুপাখিও আর অবশিষ্ট নেই তাদের। এটা খুবই ভয়াবহ।’

হোয়াইট হাউসের শোক প্রকাশ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও কার্যালয় হোয়াইট হাউস বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে মাউইতে উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনাকারী কর্মীদের প্রশংসা করে বলেছে, দুর্গতদের সহায়তা করতে যা যা প্রয়োজন হবে— তার সব কিছু যোগান দেবে কেন্দ্রীয় সরকার।

উদ্ধার তৎপরতায় দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল গার্ড, নৌবাহিনী, মেরিন ও কোস্টগার্ড বাহিনীকেও উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।

যুক্তরাষ্টের কেন্দ্রীয় সরকরের জরুরি অবস্থা বিভাগের কর্মকর্তা ডিয়ানে ক্রিসওয়েল জানিয়েছেন, মাউই দ্বীপের দুর্গত লোকজনের জন্য খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে।

ঠিক কী কারণে এত বড় দাবানল ঘটল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তারা মাউই দ্বীপে গত কিছুদিন ধর চলা তাপপ্রবাহ ও তার জেরে গাছপালা শুকিয়ে যাওয়া, বাতাসে জলীয় বাস্পের স্বল্পতা, এবং প্রশান্ত মহাসাগরে উদ্ভূত ঘুর্ণিঝড় ডোরা প্রভাবে সৃষ্ট প্রবল বাতাকে এই দাবানলের প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করেছেন।

আরএস