হরদীপ সিং নিজ্জারের নথি প্রকাশ দিল্লির

ফাইভ আইস থেকে তথ্য পেয়ে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ ট্রুডোর : যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩, ০১:৩৭ পিএম

বৈশ্বিক গোয়েন্দা সংস্থা থেকে বেশ কিছু খবর এসেছিল কানাডার কাছে। সেই সূত্রের ওপর ভিত্তি করেই ভারতের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। চাঞ্চল্যকর এই দাবি করেছেন কানাডায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড কোহেন। এদিকে খালিস্তানি নেতা নিজ্জারের নথি প্রকাশ করেছে ভারত।

কয়েক দিন আগেই সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, আমেরিকাসহ বেশ কয়েকটি দেশের গোয়েন্দাদের এই চক্রের সাহায্যেই খালিস্তানি উগ্র হরদীপ সিং নিজ্জারের খুনের তদন্ত চালাচ্ছে কানাডা। সেই খবরের সত্যতা পাওয়া গেল মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে। ইন্টারন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের একটি গোষ্ঠী রয়েছে যা ফাইভ আইজ নামে পরিচিত।  

গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে কানাডা ছাড়াও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। গোটা বিশ্বে ঘটে চলা নানা রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, সামরিক ও চরবৃত্তির ওপর এই দেশগুলো একসঙ্গে নজর রাখে। কয়েক দিন আগেই কানাডার একটি সংবাদমাধ্যম জানায়, হরদীপ সিং নিজ্জার খুনের তদন্তে কানাডাকে সাহায্য করেছিল আরো চারটি দেশ, অর্থাত্ এই ফাইভ আইজ।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত এক সাক্ষাত্কারে বলেন, ফাইভ আইজের তথ্যের ভিত্তিতেই ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী। তবে ওয়াশিংটন পোস্টের একটি খবর একেবারে উড়িয়ে দিয়েছেন কোহেন। ঐ খবরে বলা হয়েছিল, কানাডা চায় যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য বন্ধু দেশগুলো যেন প্রকাশ্যে ভারতের নিন্দা জানায়। কিন্তু এই খবরটি উড়িয়ে দিয়েছেন কানাডায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

প্রসঙ্গত, কানাডার সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে জানা গেছে, একটি পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে ভারতীয় কর্মকর্তাদের কথোপকথনের ওপর আড়ি পেতেছিল কানাডা। দুই দেশের মধ্যে পাঠানো সংকেতের ওপরেও নজরদারি করা হয়। এমনকি কানাডায় নিযুক্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভারতে থাকা কূটনীতিকদের আলোচনার দিকেও নজর রেখেছিল কানাডার গোয়েন্দা বিভাগ। প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছিল এই নজরদারি প্রক্রিয়া।

গোটা প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করেছিল এই ফাইভ আইজ। প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের পক্ষ থেকে প্রকাশিত নথিতে বলা হয়েছে, নিহত উগ্র হরদীপের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগাযোগ ছিল। 

গোয়েন্দাদের পক্ষে দেওয়া রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতের নানা জায়গায় হামলা চালানোর ছক কষছে হরদীপ। ঐ ‘ডসিয়েরে’ দেখানো হয়েছে, ১৯৮০ সাল থেকেই নানা অপরাধমূলক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত ছিল হরদীপ। এর জেরেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। আশির দশকে এক স্থানীয় সন্ত্রাসী থেকে কীভাবে হরদীপ উগ্র হয়ে উঠল তা তুলে ধরা হয়েছে ঐ নথিতে।

ডসিয়েরে বলা হয়, ১৯৯৬ সালে হরদীপ পাসপোর্ট জালিয়াতি করে কানাডায় যায়। সেই সময়ে ট্রাকচালক হিসেবে কাজ করত সে। পাকিস্তানে অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণও সে নিয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে ঐ নথিতে। পাঞ্জাবের জালন্ধরের বাসিন্দা হরদীপ এরপরেই গুরনেক সিংহের ছত্রছায়ায় ক্রমশ আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কুখ্যাত জগতে পরিচিতি তৈরি করে।

১৯৮০ থেকে ’৯০-এর মধ্যে উগ্র সংগঠন খালিস্তান কমান্ডো ফোর্সের সঙ্গে যুক্ত হয় সে। ২০১২ সাল থেকে খালিস্তান টাইগার ফোর্সের প্রধান জগতার সিংহ তারার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে হরদীপ। জগদীপের সূত্রেই হরদীপের পাকিস্তান যোগ গভীর হয়। পাকিস্তান থেকে ফিরে সে মাদক ও চোরাচালানে প্রাপ্ত অর্থ সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপে ব্যবহার করতে শুরু করে।

জগদীপের সঙ্গে যুক্ত হয়েই পাঞ্জাবে নাশকতামূলক কার্যকলাপের ছক কষেছিল হরদীপ। কানাডায় নিজস্ব সংগঠন তৈরি করে। ঐ দলেরই সদস্য ছিল মনজিত্ সিংহ ধালিওয়াল, সর্বজিত্ সিংহ, অনুপবীর সিংহ, দর্শন সিংহরা। ২০১৫ সালে হরদীপের দলের এই সদস্যেরা কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে নথিতে। ২০১৪ সালে হরিয়ানার সিরসায় ডেরা সাচ্চা সউদায় হামলার ছক কষে হরদীপ।

পাঞ্জাবের গ্যাংস্টার আরশদীপ সিংহ গিল ওরফে আর্শ ডালার সঙ্গে যোগ দেয়। হরদীপকে ঘিরে অভিযোগ-পালটা অভিযোগের মধ্যে গতকাল কংগ্রেস এমপি শশী থারুর জানিয়েছেন, একটি অভিযোগের থেকেও ভারত-কানাডা সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। সম্পর্ক পুনর্গঠনে জোর দিয়েছেন তিনি। তার আশা, দুই পক্ষই পরিণত আচরণ করবে—যাতে এই বিতর্কের কোনো প্রভাব না থাকে। শশীর কথায়, ‘দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। -আনন্দবাজার পত্রিকা ও সংবাদ প্রতিদিন

এইচআর