জয়শঙ্কর

ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বে কাশ্মিরের সম্পর্ক নেই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক    প্রকাশিত: মে ২৫, ২০২৫, ০৪:০৮ পিএম

জম্মু ও কাশ্মিরের দখল নিয়ে গত ৭ দশকেরও বেশি সময় ধরে দ্বন্দ্ব চলছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে; তবে পেহেলগামে হামলার পর থেকে উত্তেজনা শুরু হয়েছে, তার সঙ্গে সেই দ্বন্দ্বের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রাহ্মনিয়াম জয়শঙ্কর।

শনিবার বার্লিনে জার্মানিভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক সংস্থা জার্মান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জয়শঙ্কর। সেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয় যে জম্মু-কাশ্মির নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব এবং এই দ্বন্দ্বের সঙ্গে পেহেলগামে হামলার সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। কাশ্মির নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণেই সাম্প্রতিক পেহেলাগামে সাম্প্রতিক হামলা ঘটল কি না— সে প্রশ্নও করা হয় তাকে।

জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, “প্রথম কথা হলো, পেহেলগামে হামলার সরাসরি কাশ্মিরের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এটি ছিল একটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা এবং এ হামলার উদ্দেশ্য ছিল মানুষের মধ্যে ভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মিরের পর্যটন খাত ধ্বংস করা, যা সেই রাজ্যের প্রধান অর্থনৈতিক খাত এবং ভারতজুড়ে ধর্মীয় বিভেদের রাজনীতি উসকে দেওয়া।”

গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় হামলা চালিয়ে ২৬ জন পর্যটককে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। নিহত এই পর্যটকদের সবাই পুরুষ এবং অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী।

এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বার একটি শাখা এই টিআরএফ।

এ ঘটনায় সিন্ধু নদের পানি বণ্টনচুক্তি ও পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিলসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কয়েকটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয় ভারত। জবাবে ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ, ভিসা বাতিলসহ কয়েকটি পাল্টা পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তানও।

দুই দেশের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনার মধ্যেই গত ৭ মে পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মিরসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এক সংক্ষিপ্ত সেনা অভিযান পরিচালনা করে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী। নয়াদিল্লির তথ্য অনুযায়ী, এ অভিযানে ৭০ জন পাকিস্তানি সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। তবে পাকিস্তানের দাবি, নিহত হয়েছেন ১১ সেনাসহ ৫১ জন এবং আহত হয়েছে ৭৮ জন।

‘অপারেশন সিঁদুর’ এর পাল্টা জবাব দিতে তার দু’দিন পর ৯ মে ‘অপারেশন বুনিয়ান উম মারসুস’ শুরু করে পাকিস্তান। এতে ভারতে নিহত হন অন্তত ৩৬ জন এবং আহত হন কমপক্ষে ৪৬ জন।

যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে ১০ মে থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও এখনও ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্য।

শনিবারের সাক্ষাৎকারে জয়শঙ্কর বলেন, “বিশ্বের কোনো দেশই সন্ত্রাসবাদকে অনুমোদন করে না। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে শুধু অনুমোদনই নয়, উপরন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে।”

“অপারেশন সিঁদুর-এর উদ্দেশ্য পাকিস্তানে হামলা চালানো নয়, বরং সেখানে আশ্রয় নেওয়া সন্ত্রাসীদের এবং তাদের ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করা।  আমরা পেহেলগামে হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তার অংশ হিসেবেই অপারেশন সিঁদুর পরিচালনা করা হয়েছিল।”

সূত্র : এনডিটিভি অনলাইন

আরএস