গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আল জাজিরার পাঁচ সাংবাদিক নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ১১:২৫ এএম

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি হামলায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার পাঁচ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। ভূখণ্ডটির গাজা সিটিতে আল-শিফা হাসপাতালের কাছে হওয়া ইসরাইলি হামলায় তারা প্রাণ হারান।

সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায় গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালের প্রধান ফটকের বাইরে অবস্থিত তাঁবুতে হামলায় সাতজন নিহত হন। তাদের মধ্যে রয়েছেন আল জাজিরার সংবাদদাতা আনাস আল-শরিফ, মোহাম্মদ ক্রিকেহ এবং ক্যামেরা অপারেটর ইব্রাহিম জাহের, মোহাম্মদ নৌফাল এবং মোমেন আলিওয়া।

নিহত হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ২৮ বছর বয়সী আল-শরীফ উত্তর গাজা থেকে যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি সামাজিক মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন ইসরায়েল গাজা শহরের পূর্ব এবং দক্ষিণ অংশে তীব্র বোমাবর্ষণ করছে। আল শরীফ আল জাজিরার একজন সুপরিচিত সাংবাদিক ছিলেন।

তার শেষ ভিডিওতে ইসরায়েলের তীব্র বোমাবর্ষণের বিকট শব্দ শোনা গেছে। সে সময় অন্ধকার আকাশ কমলা আলোর ঝলকানিতে আলোকিত হয়ে ওঠে।

যদি বেঁচে না থাকেন তবে তার মৃত্যুর পর যেন প্রকাশিত হয় এমন একটি বার্তায় আল শরীফ লিখেছেন, তিনি প্রচণ্ড যন্ত্রণার মধ্যে বেঁচে ছিলেন। বার বার আঘাত ও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে।

জেএইচআর

তিনি ওই বার্তায় লিখে গেছেন, সবকিছুর পরেও আমি সত্যকে যেমন আছে তেমনভাবে প্রকাশ করতে কখনও দ্বিধা করিনি, বিকৃতি বা ভুল কোনো তথ্য উপস্থাপন করিনি। এই আশায় যে আল্লাহ তাদের সাক্ষী থাকবেন যারা নীরব ছিলেন, যারা আমাদের হত্যা মেনে নিয়েছিলেন এবং যারা আমাদের নিঃশ্বাস রোধ করেছে। আমাদের শিশু ও নারীদের ছিন্নভিন্ন দেহও তাদের হৃদয়কে নাড়া দেয়নি বা দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের জনগণ যে গণহত্যার শিকার হচ্ছে তারা সেটা থামাতে পারেনি।

স্ত্রী বায়ানকে ছেড়ে যেতে হবে এবং ছেলে সালাহ ও মেয়ে শামের বড় হওয়া দেখে যেতে পারবেন না বলেও দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন আনাস আল-শরিফ।

এক বিবৃতিতে আল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক এই হত্যাকাণ্ডকে ‘সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আরেকটি স্পষ্ট এবং পূর্বপরিকল্পিত আক্রমণ’ বলে নিন্দা জানিয়েছে।

গাজার অন্যতম সাহসী সাংবাদিক আনাস আল শরীফ এবং তার সহকর্মীদের হত্যার নির্দেশ, গাজার আসন্ন দখল এবং দখলদারিত্বের বিষয়টি প্রকাশকারী কণ্ঠস্বরকে নীরব করার একটি মরিয়া প্রচেষ্টা বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

এই চলমান গণহত্যা বন্ধে এবং সাংবাদিকদের ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা বন্ধ করার জন্য সিদ্ধান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সকল প্রাসঙ্গিক সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আল জাজিরা।

আল জাজিরা জোর দিয়ে বলছে যে অপরাধীদের জন্য দায়মুক্তি এবং জবাবদিহিতার অভাব ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করছে এবং সত্যের বিরুদ্ধে আরও নিপীড়নকে উৎসাহিত করছে।

আল জাজিরার সংবাদদাতা হানি মাহমুদ, হামলার সময় মাত্র এক ব্লক দূরে ছিলেন। তিনি বলেন, গত ২২ মাসের যুদ্ধে আল-শরীফের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করা তার জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল।

নেটওয়ার্কের ইংরেজি চ্যানেলে কর্মরত মাহমুদ বলেন, গাজায় ফিলিস্তিনিদের দুর্ভিক্ষ, দুর্ভিক্ষ এবং অপুষ্টির ওপর নিরলসভাবে প্রতিবেদন করার কারণে সাংবাদিকদের হত্যা করা হয়েছে, কারণ তারা এই অপরাধের সত্যতা সকলের কাছে তুলে ধরছেন।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েল গাজায় আক্রমণ চালানোর পর থেকে নিয়মিতভাবে গাজার ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের হামাসের সদস্য বলে অভিযুক্ত করে আসছে এবং তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় এখন পর্যন্ত ২০০ জনেরও বেশি সাংবাদিক এবং মিডিয়া কর্মীকে হত্যা করেছে, যার মধ্যে বেশ কয়েকজন আল জাজিরার সাংবাদিক এবং তাদের আত্মীয়স্বজনও রয়েছেন।