মশা নিধনের জন্য কীটনাশক সরবরাহে সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানির নাম ব্যবহার করে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মার্শাল এগ্রোভেটের তিন কর্মকর্তাসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। সিটি কর্পোরেশনের সহকারী ভান্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা মোঃ রাহাত আল ফয়সাল (৩২) বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। বুধবার আদালতের গুলশান থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখা সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
মামলার আসামিরা হলেন- মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আলাউদ্দিন, নির্বাহী পরিচালক মোঃ নাসির উদ্দিন আহমেদ ও চীনা নাগরিক লি কিউইয়াং।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ডেঙ্গু মশক নিধন কাজে ব্যবহারের জন্য পাঁচ হাজার কেজি কীটনাশক সরবরাহ কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডস্ট্রিজ লিমিটেড দরপত্র দাখিল করলে কোম্পানির দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হয়।
এরপর সরবরাহ কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে বিগত ২১ মে সিটি করপোরেশনের সাথে মার্শাল এগ্রোভেটের চুক্তি সম্পন্ন হয়। চুক্তিতে বর্ণিত শর্তে ৬০ দিনের মধ্যে কীটনাশক সরবরাহ করার কথা বলা হয়। চুক্তি মোতাবেক উল্লেখিত কীটনাশক বর্ণিত স্পেসিফিকেশন অনুসারে সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করে সরবরাহ করবে এবং যাতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত গ্যারান্টি থাকবে। চুক্তির উল্লেখ করা হয়, সরবরাহকৃত কীটনাশক মাঠ পর্যায়ে এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরীক্ষায় কার্যকারিতা নির্ণয়ে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তারা তা মেনে নিবে।
এরপর আসামিগণ সিঙ্গাপুর হতে আমদানীকৃত বলে সে দেশীয় কোম্পানি বেস্ট কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের নামসম্বলিত ও তাদের মোড়ক ব্যবহার করে উল্লেখিত কীটনাশক বিগত ১লা আগস্ট ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ক্রয় ভান্ডারে সরবরাহ করে।
সরবরাহের পর বিগত ৩ আগস্ট কেমিক্যাল ব্যবহারের নিমিত্ত পরীক্ষার লক্ষ্যে ল্যাবে পাঠানো এবং প্রজেক্টের উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান করা হয়। উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। আসামিরা উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে লি কিউইয়াং নামক এক ব্যক্তিকে কীটনাশক সরবরাহকারী বেস্ট কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিনিধি হিসেবে আগত অতিথিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।
পরবর্তীতে অনুষ্ঠানটির সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয়। সংবাদটি উক্ত বেস্ট কেমিক্যাল কোম্পানির দৃষ্টিগোচর হলে তারা তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে গত ১৪ আগস্ট পোস্ট করে জানায়, তারা বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠানকে উল্লেখিত কীটনাশক সরবরাহ করেন নাই। পোস্টটি প্রকাশিত হওয়ার পর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে তাদের সাথে যোগাযোগ করলে গত ১৭ আগস্ট সিঙ্গাপুরের কোম্পানিটি আসামিগণের প্রতারণার বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করেন।
এরপর আসামিদেরকে শোকজ নোটিশ পাঠানো হলে তারা উল্লেখিত বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেন নাই। এ থেকে আসামিগণ পরস্পরের সাথে যোগসাজশের মাধ্যমে প্রতারণা করে কীটনাশক সরবরাহের মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের লক্ষ্যে এই কাজ করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়।
মামলায় আসামির বিরুদ্ধে দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ এর ১০৯, ৪০৬ ৪২০ এবং ৪৬৩ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
আরএস