খাসির মাংসে পশম সহজেই পরিষ্কার করার ৮টি কৌশল

আমার সংবাদ ডেস্ক: প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২৫, ০৪:৫৬ পিএম

পবিত্র ঈদুল আজহায় অন্যান্য পশুর পাশাপাশি খাসিও কোরবানি করা হয়। অনেকেই আছেন বিভিন্ন রোগের কারণে গরুর মাংস খাওয়া এড়িয়ে চলেন। তাই ঈদে খাসির মাংস রান্না মানেই তাদের কাছে একরাশ স্বাদ, গন্ধ আর অন্য রকম অনুভূতি। এছাড়া স্বাভাবিকভাবে সবার কাছেই এই মাংস অনেক পছন্দনীয়।

তবে খাসির মাংস রান্না করতে গিয়ে বা খেতে বসে হঠাৎ চোখে পড়ল ছোট্ট একটা পশম। যা খাবারের প্রতি আগ্রহ নিমেষেই কোথায় যেন হারিয়ে যায়, মুছে যায় মনের আনন্দটাও। শুধু আপনার নয়, অতিথিদের কাছেও এমন অভিজ্ঞতা হয়ে উঠতে পারে বিব্রতকর।

তাই বিভিন্ন ধরনের মসলা দিয়ে সুস্বাদু করে রান্না করার পরও সামান্য অসতর্কতা পুরো পরিশ্রমকে বিফলে পরিণত করে। অথচ চাইলে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিতে খুব সহজেই মাংস থেকে পশম দূর করা যায়। একটু যত্ন আর সচেতনতা আপনাকে দিতে পারে ঝকঝকে, পরিষ্কার ও সুস্বাদু খাসির মাংস।

চলুন জেনে নেই খাসির মাংস থেকে পশম দূর করার কিছু কার্যকর উপায়, যা সহজও ঘরোয়া-

১. মাংস সংগ্রহের সময় খেয়াল রাখা:
ঈদের সময় কোরবানির ব্যস্ততায় অনেকেই মাংস কাটার পর পরই প্যাকেট করে নেন। কিন্তু এই তাড়াহুড়োর কারণে অনেক সময় পশমযুক্ত অংশসহ প্যাকেট করে নেন। তাই প্রথমেই মাংস সংগ্রহের সময়ই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খেয়াল রাখতে হবে।

যারা কসাই দিয়ে মাংস কাটান, তাদের বলে দিন পশম ভালোভাবে পরিষ্কার করে দিতে। আর নিজেরা কাটলে অবশ্যই মাংসের টুকরোগুলো একবার ভালোভাবে দেখে নিতে ভুলবেন না। একটু বাড়তি সতর্কতা আপনাকে পরবর্তী ভোগান্তি থেকে মুক্ত রাখবে।

২. গরম পানিতে চুবিয়ে রাখুন:
খাসির মাংস থেকে পশম দূর করার সবচেয়ে নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর উপায় হচ্ছে গরম পানিতে চুবিয়ে রাখা। একটি বড় হাঁড়িতে প্রথমেই পরিমাণ মতো পানি ফুটিয়ে নিন। এরপর মাংসের টুকরোগুলো সেই ফুটন্ত পানিতে ১-২ মিনিট রাখুন। এতে পশম ঢিলে হয়ে যায় এবং হাত বা ছুরি দিয়ে সহজেই উঠে আসে। এই পদ্ধতিতে পশমের পাশাপাশি গায়ে লেগে থাকা ধুলোবালি বা রক্তও দূর হয়ে যায়। ফলে রান্নার স্বাদকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

৩. সরাসরি আগুনে ছেঁকা দেওয়া:
অনেকেই খাসির মাংসে লেগে থাকা পশম দূর করতে পুরোনো একটি পদ্ধতি অনুসরণ করেন-তা হচ্ছে সরাসরি আগুনে মাংস ছেঁকা দেওয়া। গ্যাস বার্নার বা সরাসরি চুলায় মাংসের টুকরোগুলো হালকা করে ঘুরিয়ে নিন। এতে পশম পুড়ে যাবে এবং এক ধরনের ছেঁকা গন্ধও তৈরি হবে, যা অনেকে পছন্দ করেন।

তবে এই পদ্ধতির সময় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে মাংস যেন পুড়ে না যায় বা কাঁচা অবস্থায় শক্ত না হয়ে যায়। ছেঁকা দেওয়ার পর পরই ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিয়ে রান্না করলে সব দিক থেকেই নিরাপদ হবে।

৪. ছুরি বা ব্লেড দিয়ে চেঁছে পরিষ্কার করা:
ঈদের দিনে হাতে সময় থাকলে এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। পশম দূর করতে একটি ধারালো ছুরি বা নতুন ব্লেড দিয়ে মাংসের উপরিভাগ হালকা করে চেঁছে নিন। এটি একটু সময়সাপেক্ষ হলেও পরিষ্কার হয় নিখুঁতভাবে। এরপর পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিন। তাহলেই মাংস হবে নিরাপদ ও খাবার যোগ্য।

৫. ভিনেগার ও লবণ দিয়ে ধোয়া:
ভিনেগার ও লবণ-দুইটি উপাদানই ঘরে সাধারণত থাকে। যা খাসির মাংসের পশম দূর করতে দারুণ কার্যকর। একটি হাঁড়িতে পানি নিয়ে তাতে ২ চামচ ভিনেগার ও এক চিমটি লবণ মিশিয়ে মাংস ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এরপর হালকা করে ঘষে ধুয়ে নিলেই মিলবে পরিষ্কার ও নিরাপদ মাংস। ভিনেগারের অ্যাসিড পশম আলগা করতে সাহায্য করে। একইসঙ্গে জীবাণুও ধ্বংস করে দেয়।

৬. টুথব্রাশ ব্যবহার করুন:
খাসির মাংসে অনেক সময় এমন সূক্ষ্ম পশম লেগে থাকে, যা চোখে ভালোভাবে ধরা পড়ে না কিন্তু রান্নার সময় বা খাওয়ার সময় সমস্যা করে। এসব পশম তুলতে একটি পুরনো টুথব্রাশ বা বাসন মাজার স্পঞ্জ ব্যবহার করতে পারেন। ধীরে ধীরে চামড়ার অংশে ব্রাশ ঘষে নিন। এতে পশম উঠে যাবে, অথচ মাংসের স্বাদে কোনো প্রভাব পড়বে না। এই পদ্ধতিটি বিশেষত তারা অনুসরণ করতে পারেন যারা খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে রান্না করতে পছন্দ করেন।

৭. হাত দিয়ে ভালোভাবে ঘষে নিন:
অনেক সময় পশম মাংসের ওপর আলগা অবস্থায় থাকে। ফলে ভালো করে চোখে দেখে মাংস হাত দিয়ে ঘষে নিন। হালকা রাবার গ্লাভস পরে ঘষলে পশম আরও সহজে উঠে যাবে। ধৈর্য ধরে এই কাজ করলে বেশ ভালো ফল পাওয়া যায়।

৮. পশমের অংশ বাদ দিন:
সব চেষ্টা করার পরও যদি কোনো মাংসের টুকরোতে অতিরিক্ত পশম থেকে যায় এবং পরিষ্কার করা ঝামেলা মনে হয়, তাহলে সেই অংশ রান্না থেকে বাদ দিতে পারেন। কারণ ভালো করে পরিষ্কার না হলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই গুণগত মান বজায় রাখতে প্রয়োজনে এই সিদ্ধান্তও নিতে পারেন।

খাসির মাংস শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টিতেও সমৃদ্ধ। কিন্তু এই মাংসে পশম থাকলে তা খেতে যেমন অরুচিকর, তেমনি স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়াতে পারে। তাই এসব ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করলে সহজেই এই সমস্যা এড়ানো সম্ভব। এবার ঈদের রান্নায় থাকুক শুধু স্বাদ, আর না থাকুক কোনো অস্বস্তির পশমটুকুও।

বিআরইউ