চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার

শিল্পী মনই মানুষকে মানুষ হিসেবে তৈরি করে

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২৩, ০৫:৪৩ পিএম

মিৎসুবিশি এশীয় শিশুদের সচিত্র দিনলিপি (এনিক্কি ফেস্টা) এশিয়ার ২৪টি দেশের ৬ থেকে ১২ বছর বয়সি শিশুদের পারস্পারিক সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি অন্যতম মঞ্চ। এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন দেশের শিশুরা তাদের ভিন্ন ভিন্ন রীতি-প্রথা, সমাজ ব্যবস্থা, পরিবার, শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ের উপর অংকিত চিত্রকর্ম নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে থাকে।

শিশুদের একে অপরের সংস্কৃতি বুঝতে ও সম্মান করতে এবং একটি সুন্দর ভবিষ্যত গঠনের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে সহযোগিতা করার লক্ষ্যেই এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে।

চিত্রকর্মের মধ্য দিয়ে মনের অভিব্যক্তির পরিস্ফূটন ঘটে খুব সহজেই। তাই কোমলমতি শিশুদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডগুলো চিত্রাঙ্কনের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করার সহজ মাধ্যম হিসেবে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে মিৎসুবিশি পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি, এশিয়ান প্যাসিফিক ফেডারেশন অফ ইউনেস্কো ক্লাব এসোসিয়েশনস্ এবং জাপানের ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ইউনেস্কো এসোসিয়েশনস।

যেটাকে বলা হচ্ছে মিৎসুবিশি এশীয় শিশুদের সচিত্র দিনলিপি বাংলাদেশ (এনিক্কি ফেস্টা)। সোমবার বিকালে জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনের ২নং গ্যালারিতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত সচিত্র দিনলিপির চিত্র প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন বরেণ্যে চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চারুকলা বিভাগের পরিচালক সৈয়দা মাহবুবা করিম। ধন্যবাদ দেন একাডেমির সচিব সালাহউদ্দিন আহাম্মদ।

অনুষ্ঠানে মিৎসুবিশি এশীয় শিশুদের সচিত্র দিনলিপি (এনিক্কি ফেস্টা) ২০১৭-১৮, ২০১৯-২২ ও ২০২১-২২ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ী শিশুদের পুরস্কার ও সনদপত্র বিতরণ করেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, শিল্পী মনই মানুষকে মানুষ হিসেবে তৈরি করে। দেশকে ভালোবাসা এবং মানবিক মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেয়। তিনি বলেন, শিশুদের আঁকা চিত্রকর্ম নিয়ে বিশাল এবং গোছানো এ প্রদর্শনীর আয়োজন দেখে বিস্মিত হয়েছি। বাংলাদেশের এতগুলো শিশু শিল্পী বিদেশে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য সুনামের এবং গর্বের।

শিল্পকলার মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় পরীক্ষার নম্বর মেধার বিচারের মানদণ্ড হতে পারে না, শিশুদের প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকা, প্রকৃতির মধ্যে বেড়ে ওঠা জরুরি। প্রকৃতির সংস্পর্শে বেড়ে উঠলেই কেবল শিশু মননে শিল্পের চর্চা সম্ভব হবে।

বর্তমান সময়ে শিশুরা অনেকেই মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি ও চারুকলা শিল্পকলার নানা মাধ্যমে সম্পৃক্ত হয়ে এই শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যত গড়তে পারে। শিল্পকলার মহাপরিচালক আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানাভাবে অপপ্রচার করা হচ্ছে, আমরা এর নিন্দা জানাই। আমরা সুন্দর মানুষের দেশ চাই, নান্দনিক দেশ চাই। ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে শিশুবান্ধব সৃজনশীল বাংলাদেশ গঠন করতে চাই।

উল্লেখ্য, ১৯৯০ সাল থেকে বিরতিহীনভাবে চলা শিশুদের এই শিক্ষামূলক যাত্রায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শিল্পকলা একাডেমি এই আয়োজন করছে। উদ্বোধনী পর্ব শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি শিশু-কিশোর সংগীত ও নৃত্যদল পরিবেশনায় লিয়াকত আলী লাকীর কথা ও সুরে মেহরাজ হক তুষারের পরিচালনায় ‘আমরা সুন্দরের অতন্দ্র প্রহরী’ শীর্ষক সমবেত নৃত্য পরিবেশন এবং ‘ধন ধান্য পুষ্পে ভরা’ সমবেত সংগীত পরিবেশন করা হয়।

লিয়াকত আলী লাকীর কথা ও সুরে সোমা গিরির পরিচালনায় ‘মনের রং লেগেছে’, ‘আমরা সবাই মঞ্চ কুঁড়ি নটনন্দনে ফুঁটবো’ সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পীরা। প্রদর্শনী চলবে ২৪ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত।

এইচআর